পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

to o স্বামীজীর বাণী ও রচনা ততক্ষণ স প্রমাণ হইল না যে, ভারতবর্ষের সাহায্য প্রাচীন গ্রীস প্রাপ্ত হইয়াছিল। কিন্তু কতকগুলি পাশ্চাত্য পণ্ডিত ভারতীয় জ্যোতিষের কয়েকটি সংজ্ঞা গ্রীক জ্যোতিষের সংজ্ঞার সদৃশ দেখিয়া এবং গ্রীকরা ভারতপ্রান্তে একটি ক্ষুদ্র রাজ্য সংস্থাপন করিয়াছিল অবগত হইয়া, ভারতের যাবতীয় বিদ্যায়—সাহিত্যে, জ্যোতিষে, গণিতে—গ্ৰীক সহায়তা দেখিতে পান। শুধু তাঁহাই নহে, একজন অতিসাহসিক লিখিয়াছেন যে, ভারতের যাবতীয় বিদ্যা গ্রীকদের বিষ্ঠার ছায়া ! এক, ‘ম্লেচ্ছা বৈ যবনাস্তেষু এষা বিদ্যা প্রতিষ্ঠিতা। ঋষিবং তেহপি পূজ্যন্তে’ —এই শ্লোকের উপর পাশ্চাত্যেরা কতই না কল্পনা চালাইয়াছেন । উক্ত শ্লোকে কি প্রকারে প্রমাণীকৃত হইল যে, আর্যেরা স্নেচ্ছের নিকট শিখিয়াছেন ? ইহাও বলা যাইতে পারে যে, উক্ত শ্লোকে আর্যশিষ্য স্লেচ্ছদিগকে উৎসাহবান করিবার জন্য বিদ্যার অাদর প্রদর্শিত হইয়াছে। দ্বিতীয়তঃ গৃহে চেং মধু বিন্দেত, কিমৰ্থং পর্বতং ব্রজেং ? - আৰ্যদের প্রত্যেক বিদ্যার বীজ বেদে রহিয়াছে এবং উক্ত কোন বিদ্যার প্রত্যেক সংজ্ঞাই বেদ হইতে আরম্ভ করিয়া বর্তমান কালের গ্রন্থসকলে পর্যন্ত দেখানো যাইতে পারে। এ অপ্রাসঙ্গিক যবনাধিপত্যের আবশ্বকতাই নাই । তৃতীয়ত: আর্য জ্যোতিষের প্রত্যেক গ্ৰীকসদৃশ শব্দ সংস্কৃত হইতে সহজেই ব্যুৎপন্ন হয়, উপস্থিত ব্যুৎপত্তি ত্যাগ করিয়া যাবনিক ব্যুৎপত্তি গ্রহণে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের যে কি অধিকার, তাহাও বুঝি না। ঐ প্রকার কালিদাসাদিকবি-প্রণীত নাটকে যবনিকা’ শব্দের উল্লেখ দেখিয়া যদি ঐ সময়ের যাবতীয় কাব্যনাটকের উপর যবনাধিপত্য আপত্তি হয়, তাহা হইলে প্রথমে বিবেচ্য যে, আৰ্যনাটক গ্রীর্কনাটকের সদৃশ কি না। যাহারা উভয় ভাষায় নাটকরচনা-প্রণালী আলোচনা করিয়াছেন, তাহদের অবশুই বলিতে হইবে যে, ঐ সোসাদৃশ্ব কেবল প্রবন্ধকারের কল্পনাজগতে, বাস্তবিক জগতে তাহার কস্মিনকালেও বর্তমানত্ব নাই। সে গ্রীক কোরস কোথায় ? সে গ্রীক যবনিক নাট্যমঞ্চের একদিকে, আৰ্যনাটকে তাহার ঠিক বিপরীতে । সে রচনাপ্রণালী এক, আৰ্যনাটকের আর এক । জার্ধনাটকের সাদৃপ্ত গ্রীক নাটকে আদৌ তো নাই, বরং শেক্সপীয়রপ্রণীত নাটকের সহিত ভূরি ভূরি সোসাদৃপ্ত আছে।