পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

స్క్రి* স্বামীজীর বাণী ও রচনা গঙ্গায় কি এক টান আছে তা ভোলবার নয় । সে কি স্বদেশপ্রিয়তা বা বাল্যসংস্কার কে জানে ? হিন্দুর সঙ্গে মায়ের সঙ্গে একি সম্বন্ধ —কুসংস্কার কি ?—হবে! গঙ্গা গঙ্গা ক’রে জন্ম কাটায়, গঙ্গাজলে মরে, দূর দূরাস্তরের লোক গঙ্গাজল নিয়ে যায়, তাম্রপাত্রে যত্ন ক’রে রাখে, পালপার্বণে বিন্দু বিন্দু পান করে। রাজারাজড়ার ঘড়া পুরে রাখে, কত অর্থব্যয় ক’রে গঙ্গোত্রীর জল রামেশ্বরের উপর নিয়ে গিয়ে চড়ায় ; হিন্দু বিদেশে যায়—রেঙ্গুন, জাভা, হংকং, জাষ্ট্রীবর, মাডাগাস্কর, সুয়েজ, এডেন, মালটা—সঙ্গে গঙ্গাজল, সঙ্গে গীত। গীতা গঙ্গা–হিদুর হিন্দুয়ানি। গেল বারে আমিও একটু নিয়ে গিয়েছিলুম —কি জানি। বাগে পেলেই এক আধ বিন্দু পান করতাম। পান করলেই কিন্তু সে পাশ্চাত্য জনস্রোতের মধ্যে, সভ্যতার কল্লোলের মধ্যে, সে কোটি কোটি মানবের উন্মত্তপ্রায় দ্রুতপদসঞ্চারের মধ্যে মন যেন স্থির হয়ে যেত ! সে জনস্রোত, সে রজোগুণের আস্ফালন, সে পদে পদে প্রতিদ্বন্দ্বিসংঘর্ষ, সে বিলাসক্ষেত্র, অমরাবতীসম প্যারিস, লণ্ডন, নিউইয়র্ক, বার্লিন, রোম, সব লোপ হয়ে যেত, আর শুনতাম—সেই হির হর হর', দেখতাম—সেই হিমালয়ক্রোড়স্থ বিজন বিপিন, আর কল্লোলিনী সুরতরঙ্গিণী যেন হৃদয়ে মস্তকে শিরায় শিরায় সঞ্চার করছেন, আর গর্জে গর্জে ডাকছেন—“হর হর হর! এবার তোমরাও পাঠিয়েছ দেখছি মাকে মান্দ্রাজের জন্য। কিন্তু একটা কি অদ্ভূত পাত্রের মধ্যে মাকে প্রবেশ করিয়েছ ভায়া। তু-ভায়া বালবুহ্মচারী ‘জলন্নিব ব্রহ্মময়েন তেজসা ; ছিলেন ‘নমো ব্রহ্মণে, হয়েছেন ‘নমো নারায়ণায়’ (বাপ, রক্ষা আছে! ), তাই বুঝি ভায়ার হস্তে ব্ৰহ্মার কমণ্ডলু ছেড়ে মায়ের বদনায় প্রবেশ । যা হোক, খানিক রাত্রে উঠে দেখি, মাস্তুর সেই বৃহৎ বদনাকার কমণ্ডলুর মধ্যে অবস্থানটা অসহ্য হয়ে উঠেছে। সেটা ভেদ’ক’রে মা বেরুবার * চেষ্টা করছেন। ভাবলুম সর্বনাশ, এইখানেই যদি হিমাচল-ভেদ, ঐরাবতভাসান, জহর কুটার ভাঙা প্রভৃতি পর্বাভিনয় হয় তো—গেছি। স্তব স্তুতি অনেক করলুম, মাকে অনেক বুঝিয়ে বললুম-মা! একটু থাক, কাল মান্দ্রাজে নেমে যা করবার হয় করে, সে দেশে হস্তী অপেক্ষাও স্বল্পবুদ্ধি অনেক আছেন, সকলেরই প্রায় জহর কুটার, আর ঐ যে চকচকে কামানো টিকিওয়ালা মাথাগুলি, ওগুলি সব প্রায় শিলাখণ্ডে তৈয়ারি, হিমাচল তো ওর কাছে মাখম, যত পার ভেঙো, এখন একটু অপেক্ষা কর। উহু ; মা কি শোনে!