পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՀ স্বামীজীর বাণী ও রচনা ছ-তলা । যেদিকটা চেপটা, তারই উপর তলায় একটা কাঠের বারান্দা বার করা থাকত। তারই সামনে কমাণ্ডারের ঘর—বৈঠক। আশে পাশে অফিসারদের । তারপর একটা মস্ত ছাত—উপর খোলা । ছাতের ওপাশে আবার দু-চারটি ঘর। নীচের তলায়ও ঐ রকম ঢাকা দালান, তার নীচেও দালান ; তার নীচে দালান এবং মাল্লাদের শোবার স্থান, খাবার স্থান ইত্যাদি । প্রত্যেক তলার দালানের দু-পাশে তোপ বসানো, সারি সারি অঁালের গায়ে কাটা, তার মধ্য দিয়ে তোপের মুখ—দু-পাশে রাশীকৃত গোলা ( আর যুদ্ধের সময় বারুদের থলে ) । তখনকার যুদ্ধ-জাহাজের প্রত্যেক তলাই বড় নীচু ছিল ; মাথা হেঁট ক’রে চলতে হ’ত । তখন নৌ-যোদ্ধা যোগাড় করতেও অনেক কষ্ট পেতে হ’ত । সরকারের হুকুম ছিল যে, যেখান থেকে পার ধরে, বেঁধে, তুলিয়ে লোক নিয়ে যাও । মায়ের কাছ থেকে ছেলে, স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামী—জোর ক’রে ছিনিয়ে নিয়ে যেত। একবার জাহাজে তুলতে পারলে হয়, তারপর—বেচারা কখন হয়তো জাহাজে চড়েনি—একেবারে হুকুম হ’ল, মাস্তুলে ওঠ । ভয় পেয়ে হুকুম নাশুনলেই চাবুক। কতক মরেও যেত। আইন করলেন আমীরেরা, দেশ-দেশাস্তরের বাণিজ্য লুটপাট করবার জন্য ; রাজস্ব ভোগ করবেন তারা, আর গরীবদের খালি রক্তপাত, শরীরপাত, যা চিরকাল এ পৃথিবীতে হয়ে আসছে! এখন ও সব আইন নেই, এখন আর ‘প্রেস গ্যাঙ্গের নামে চাষ ভুষোর হৃৎকম্প হয় না। এখন খুশির সওদা ; তবে অনেকগুলি চোর-ছ্যাচড় ছোড়াকে জেলে না দিয়ে এই যুদ্ধজাহাজে নাবিকের কর্ম শেখানে হয় । বাষ্পবল এ সমস্তই বদলে ফেলেছে। এখন পল—জাহাজে অনাবশুক বাহার। হাওয়ার সহায়তার উপর নির্ভর বড়ই অল্প। • ঝড়-ঝাপটার ভয়ও অনেক কম। কেবল জাহাজ না পাহাড় পর্বতে ধাক্কা খায়, এই বাচাতে হয়। যুদ্ধ জাহাজ তো একেবারে পূর্বের অবস্থার সঙ্গে বিলকুল পৃথক্ । দেখে তো জাহাজ ব’লে মনেই হয় না । এক একটি ছোট বড় ভাসন্ত লোহার কেল্লা । তোপও সংখ্যায় অনেক কমে গেছে। তবে এখনকার কলের তোপের কাছে সে প্রাচীন তোপ ছেলেখেলা বই তো নয়। আর এ যুদ্ধ জাহাজের বেগই বা কি ! সব চেয়ে ছোটগুলি 'টরপিডো ছড়বার জন্য, তার চেয়ে একটু বড়গুলি শত্রুর বাণিজ্যপোত দখল করতে, আর বড় বড়গুলি হচ্চেন বিরাট যুদ্ধের আয়োজন।