পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

br● স্বামীজীর বাণী ও রচনা এই সকল বাঙালী লোকজন প্রায় আজকাল সব জাহাজে—যেগুলি কলকাতা হতে ইউরোপে যায়। এদের ক্রমে একটা জাত স্বষ্টি হচ্চে ; কতকগুলি জাহাজী পারিভাষিক শব্দেরও স্বষ্টি হচ্চে । কাপ্তেনকে এরা বলে—‘বাড়িওয়ালা, অফিসার—‘মালিম, মাস্তুল—‘ডোল, পাল—‘সড়', নামাও—‘আরিয়া’, ওঠাও—‘হাবিস’ (heave ) ইত্যাদি । খালাসীদের এবং কয়লাওয়ালাদের একজন ক’রে সরদার আছে, তার নাম ‘সারেঙ্গ, তার নীচে দুই তিন জন ‘টিগুলি’, তারপর খালাসী বা কয়লাওয়াল । খানসামাদের ( boy ) কর্তার নাম ‘বঢ়লার’ ( butler ) ; তার ওপর একজন গোরা স্টয়ার্ড’। খালাসীরা জাহাজ ধোওয়া-পোছা, কাছি ফেলা তোলা, নৌকা নামানো ওঠানো, পাল তোলা, পাল নামানে ( যদিও বাপপোতে ইহা কদাপি হয় ) ইত্যাদি কাজ করে। সারেঙ্গ ও টিগুলির সর্বদাই সঙ্গে সঙ্গে ফিরছে, এবং কাজ করছে। কয়লাওয়াল এঞ্জিন ঘরে আগুন ঠিক রাখছে ; তাদের কাজ দিনরাত আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করা, আর এঞ্জিন ধুয়ে পুছে সাফ রাখা । সে বিরাট এঞ্জিন, আর তার শাখ প্রশাখা সাফ রাখা কি সোজা কাজ ? 'সারেঙ্গ’ এবং তার ভাই’ আসিস্টান্ট সারেঙ্গ কলকাতার লোক, বাঙলা কয়, অনেকটা ভদ্রলোকের মতো ; লিখতে পড়তে পারে, স্কুলে পড়েছিল, ইংরেজীও কয়—কাজ চালানো। সারেঙ্গের তের বছরের ছেলে কাপ্তেনের চাকর—দরজায় থাকে আরদালী । এই সকল বাঙালী খালাসী, কয়লাওয়ালা, খানসাম প্রভৃতির কাজ দেখে, স্বজাতির উপর যে একটা হতাশ বুদ্ধি আছে, সেটা অনেকটা ক’মে গেল । এরা কেমন আস্তে আস্তে মানুষ হ’য়ে আসছে, কেমন সবলশরীর হয়েছে, কেমন নিৰ্ভীক অথচ শাস্ত! সে নেটিভি পা-চাটা ভাব মেথরগুলোরও নেই,—কি পরিবর্তন ! দেশী মাল্লার কাজ করে ভাল, মুখে কথাটি নাই, আবার সিকিখান গোরার মাইনে। বিলাতে অনেকে অসন্তুষ্ট ; বিশেষ—অনেক গোরার অন্ন যাচ্ছে দেখে, খুশী নয়। তারা মাঝে মাঝে হাঙ্গামা তোলে। আর তো , কিছু বলবার নেই ; কাজে গোরার চেয়ে চটপটে । তবে বলে, ঝড়-ঝাপট হলে, জাহাজ বিপদে পড়লে এদের সাহস থাকে না। হরিবোল হরি! কাজে দেখা যাচ্চে—ও অপবাদ মিথ্যা । বিপদের সময় গোরাগুলো ভয়ে,