পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R স্বামী যদি সত্যিই কপালে ঘটে, নরেন এসে আমাকে না নিয়ে যায়, তবু আর কারও সঙ্গে আমার বিয়ে কোন মতেই হতে পায়বে না । সে রাত্রে নিশ্চয় আমার বুক চিরে ভলকে ভলকে রক্ত মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়বে, ধরাধরি ক’রে আমাকে বিবাহ-সভা থেকে বিছানায় তুলে নিয়ে যেতে হবে, এ বিশ্বাস আমার মনে একেবারে বদ্ধমূল হয়েছিল। কিন্তু কৈ কিছুই তা হ’ল না। আরও পাঁচজন বাঙ্গালীর মেয়ের যেমন হয়। শুভকৰ্ম্ম তেমনি ক’রে আমারও সমাধা হয়ে গেল, এবং তেমনি ক’রেই একদিন শ্বশুরবাড়ী যাত্রা কয়লুম। শুধু যাবার সময়টিতে পান্ধীর ফ্যাক দিয়ে সেই কঁাটালি-চাপার কুঞ্জটায় চোখ পড়ায় হঠাৎ চোখে জল এল । সে যে আমাদের কত দিনের কত চোখের জল, কত দিব্যি-দিলাশার নীরব-সাক্ষী । w আমার চিতোর গ্রামের সম্বন্ধটা যে দিন পাকা হ’য়ে গেল, ওই গাছটার আড়ালে বসেই অনেক অশ্রু-বিনিময়ের পর স্থির হয়েছিল, সে এসে একদিন আমাকে নিয়ে চলে যাবে। কেন, কোথায় প্রভৃতি বাহুল্য প্রশ্নের তখন আবশ্যক হয় নি । আর কিছু না, শুধু যাবার সময় একবার যদি দেখা হ’ত -কেন সে আমাকে আর চাইলে না, কেন আর একটা দিনও দেখা দিলে না-শুধু যদি খবরটা পেতুম। , শ্বশুরবাড়ী গেলুম, বিয়ের বাকি অনুষ্ঠানও শেষ হ’য়ে গেল। অর্থাৎ আমি আমার স্বামীর ধৰ্ম্মপত্নীর পদে এইবার পুকা হয়ে বস্লুম।. দেখলুম, স্বামীর প্রতি বিতৃষ্ণা শুধু এক আমন্ত্র নয়। বাড়ীশুদ্ধ আমার দলে। শ্বশুর নেই, সৎ-শাশুড়ী, তার নিজের ছেলৈ দুটি, একটি বউ এবং বিধবা মেয়েটি নিয়েই ব্যতিব্যস্ত ! এতদিন নিরাপদে সংসার কবৃছিলেন, হঠাৎ একটা সতেরো আঠারো বছরের মস্ত বৌ দেখে তার সমস্ত মন সশস্ত্ৰ জেগে উঠল। কিন্তু মুখে বললেন, “বাঁচলুম। বৌমা, তোমার