পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী RR হাতে সংসার ফেলে দিয়ে এখন দু’দণ্ড ঠাকুরদের নাম কবৃতে পাবো। ঘনশ্যাম আমার পেটের ছেলের চেয়েও বেশি ; সে বেঁচে থাকুলেই তবে সব বজায় থাকৃবে, এইটি বুঝে শুধু কাজ ক’রে মা, আর কিছু আমি চাইনে।” র্তার কাজ তিনি কবৃবেন, আমার কাজ আমি কবুলুম, বলুলুম, *আচ্ছা।” কিন্তু সে ওই কুস্তিগীরের তাল ঠোকার মত। প্যাচ মাৰ্বতে যে দু’জনেই জানি, তা ইসারায় জানিয়ে দেওয়া। কিন্তু কত শীঘ্ৰ মেয়েমানুষ যে মেয়েমানুষকে চিনতে পারে, এ এক আশ্চৰ্য্য ব্যাপাের। তাকে জানতে আমারও যেমন দেরি হােল না, আমাকেও দু’দিনের মধ্যে চিনে নিয়ে তিনিও তেমনি আরামের নিশ্বাস ফেললেন। বেশ বুঝলেন, স্বামীর খাওয়া-পরা, ওঠা-বসা, খরচপত্র নিয়ে দিরারাত্র চক্ৰ ধ’রে ফোসূর্কোস ক’রে বেড়াবার মত আমার উৎসাহও নেই, প্ৰবৃত্তিও নেই। মেয়েমানুষের তুণে যত প্রকার দিব্যাস্ত্ৰ আছে, “আড়ি পাতাটা” ব্ৰহ্মাস্ত্র। সুবিধা পেলে এতে মা-মেয়ে, শাশুড়ী-বেী, জা-নিনাদ, কেউ কাকে খাতির করে না। আমি ঠিক জানি, আমি যে পালঙ্কে না শুয়ে ঘরের মেঝেতে একটা মাদুর টেনে নিয়ে সারা রাত্রি পড়ে থাকৃতুম, এ সুসংবাদ র্তার অগোচর ছিল না। আগে যৈ ভেবেছিলুম, নরেনের বদলে আর কারো ঘর কবৃতে হ’লে সেই দিনই আমার বুক ফেটে যাবে, দেখলুম, সেটা ভুল। ফাটাবার চেরুবার কোন লক্ষণই টের পেলুম না। কিন্তু তাই বলে একশয্যায় শুত্বেও আমার কিছুতেই প্ৰবৃত্তি হ’লে না। দেখলুম, আমােদর স্বামীটি অদ্ভুত প্রকৃতির লোক। আমার আচরণ নিয়ে তিনি কিছুদিন পৰ্যন্ত কোন কথাই কইলেন না। অথচ মনে মনে রাগ কিংবা অতিমান ক’রে আছেন, তাও না। শুধু একদিন একটু হেসে বললেন, “ঘরে আর একটা খাট এনে বিছানাটা বড় ক’রে নিলে কি শুতে পার না ?”