পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R স্বামী যে অন্ত নেই, সেই দিন তার আভাষ পেয়েছিলুম। এত বড় পাপিষ্ঠীর মনের মধ্যেও এমন দু’টো উলুটো স্রোত একসঙ্গে ব’য়ে যাবার স্থান হাতে পারে দেখে, তখন অবাকৃ হয়ে গিয়েছিলুম! মনে মনে বলতে লাগলুম, এ যে বড় লজ্জার কথা ! নইলে এখুনি ঘুম থেকে জাগিয়ে ব’লে দিতুম, শুধু সৃষ্টিছাড়া ভালোমানুষ হ’লেই হয় না, কৰ্ত্তব্য কবুতে শেখাও দরকার। যে স্ত্রীর তুমি একবিন্দু খবর নাও না, সে তোমার জন্য কি করেচে, একবার চোখ মেলে দেখ। হা রে পোড়া কপাল ! খদ্যোৎ চায়। সূৰ্য্যদেবকে আলো ধ’রে পথ দেখাতে । তাই বলি, হতভাগীর স্পৰ্দ্ধার কি আর আদি-অন্ত দাওনি ভগবান! গরমের জন্য কি না বলতে পারিনে, ক'দিন ধ’রে প্রায়ই মাথা ধবৃছিল! দিন-পাঁচেক পরে অনেক রাত্ৰি পৰ্যন্ত ছটফট ক’রে কখন একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলুম। ঘুমের মধ্যেই যেন মনে হচ্ছিল, কে পাশে বসে ধীরে ধীরে পাখার বাতাস কবৃচে। একবার ঠক্‌ ক’রে গায়ে পাখাটা ঠেকে যেতে ঘুম ভেঙে গেল। ঘরে আলো জ্বলছিল, চেয়ে দেখলুম স্বামী ! রাত জেগে বসে পাখার বাতাস করে আমাকে ঘুম পাড়াচ্চেন! হাত দিয়ে পাখাটা ধ’রে ফেলে বলুলুম, “এ তুমি কি কবৃচ!” তিনি বললেন, “কথা কইতে হবে না, ঘুমোও, জেগে থাকুলে মাথাধরা ছাড়বে না।” আমি বলুলুম, “আমার মাথা ধ’রেছে, কে তোমাকে বললে ?” তিনি একটু হেসে জবাব দিলেন, “কেউ স্কুলনি ; আমি হাত গুণতে জানি। কারো মাথা ধ’লেই টের পাই।” বলুলুম, “তা হ’লে তা অন্য দিনও পেয়েছ বল ? মাথা ত শুধু আমার আজই ধরেনি।” তিনি আবার একটু হেসে বললেন, “রোজই পেয়েছি। কিন্তু এখন একটু ঘুমোবে, না, কথা কবে ?”