পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S স্বামী আমার স্বামীকে আমি যত দেখছিলুম, ততই আশ্চৰ্য্য হয়ে যাচ্ছিলুম। সব চেয়ে আশ্চৰ্য্য হতুমি-তঁার ক্ষমা কবৃবার ক্ষমতা দেখে। আগে আগে মনে হ’ত, এ তার দুর্বলতা, পুরুষত্ত্বের অভাব। শাসন করুবার সাধ্য নেই ব’লেই ক্ষমা করেন। কিন্তু যত দিন যাচ্ছিল, ততই টের পাচ্ছিলুম, যেমন বুদ্ধিমান তেমনি দৃঢ়। আমাকে যে “ তিনি ভেতরে ভেতরে কত ভালবেসেছেন, সে ত আমি অসংশয়ে অনুভব করতে পারি, কিন্তু সে ভালবাসার ওপর এতটুকু জোর খাটাবার সাহস আমার তা হয় না। একদিন কথায় কথায় বলেছিলুম, “আচ্ছা, তুমিই বন্ধীর সর্বস্ব, কিন্তু তোমাকে যে বাড়ী শুদ্ধ সবাই অযত্ন-অবহেলা করে, এমন কি অত্যাচার করে, এ কি তুমি ইচ্ছা কবৃলে শাসন ক’রে দিতে পার না ?” তিনি হেসে জবাব দিয়েছিলেন, “কৈ, কেউ ত অযত্ন করে না।” কিন্তু আমি নিশ্চয় জানতুম, কিছুই তঁর অবিদিত ছিল না। বলুলুম, “আচ্ছা, যত বড় দোষই হোক, তুমি কি সব মাপ কবৃতে পারো ?” তিনি তেমনি হাসিমুখে বললেন, “যে সত্যি ক্ষমা চায়, তাকে করতেই হবে-এ যে আমাদের মহাপ্রভুর আদেশ গো !” তাই এক-একদিন চুপ ক’রে বসে ভাবতুম, ভগবান যদি সত্যিই নেই, তা’ হলে এত শক্তি, এত শান্তি, ইনি পেলেন কোথায় ? এই যে আমি স্ত্রীর কৰ্ত্তব্য একদিনের জন্যে করিনে, তবু তা তিনি কোন দিন স্বামীর জোর নিয়ে আমার অমৰ্যাদা অপমান করেন। মৃ ? আমাদের ঘরের কুলুঙ্গিতে একটি শ্বেত-পাথরের গৌরাঙ্গামূৰ্ত্তি ছিল, আমি কত রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে দেখেছি, স্বামী বিছানার উপর স্তব্ধ হয়ে ব’লে একদৃষ্ঠে ষ্ঠার পানে চেয়ে আছেন, আর দু'চক্ষু ব’য়ে অশ্রুর ধারা ব’য়ে যাচ্ছে। সময়ে সময়ে তঁর মুখ দেখে আমারও যেন কান্না আসত, মনে হ’ত, অমনি ক’রে একটা দিনও কঁদিতে পাবুলে বুঝি মনের অৰ্দ্ধেক বেদনা