স্বামী 8. কথাও বলে নি। তার পরে যথাসময়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ ক’রে তিনি ঘরে শুতে এলেন । সারা-রাত্রির মধ্যে আমার সঙ্গে একটা কথাও হ’ল না । সকালবেলা সমস্ত দ্বিধা সঙ্কোচ প্ৰাণপণে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকতে যাচ্চি, মেজ-জা বললেন, “হেঁসেলে তোমার আর এসে কাজ নেই দিদি, আজ আমিই আছি!” বলুলুম, “তুমি থাকুলে কি আমাকে থাকুর্তে নেই মেজদি’ ?” “কাজ কি, মং-কি জন্যে বারণ ক’রে গেলেন”, ব’লে তিনি যে, ঘাড় ফিরিয়ে টিপে টিপে হাসতে লাগলেন, সে আমি স্পষ্ট টের পেলুম। মুখ দিয়ে আমার একটা কথাও বা’র হ’ল না-আড়ষ্ট হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে থেকে ঘরে ফিরে এলুম। s দেখলুম, বাড়ীশুদ্ধ সকলের মুখ ঘোর অন্ধকার, শুধু র্যার মুখ সব চেয়ে অন্ধকার হবার কথা, তঁর মুখেই কোন বিকার নেই। স্বামীর নিত্যপ্ৰসন্ন মুখ, আজও তেমনি প্ৰসন্ন। V হায় রে, শুধু একবার গিয়ে যদি বলি, প্ৰভু, এই পাপিষ্ঠার মুখ থেকে তার অপরাধের বিবরণ শুনে তাকে নিজের হাতে দণ্ড দাও, কিন্তু, সমস্ত লোকের এই বিচারহীন শাস্তি আর সহ হয় না ! কিন্তু, সে ত কোন মতেই পারলুম না। তবুও এই বাড়ীতে এই ঘরের মধ্যেই আমার দিন কাটুতে লাগল। এ কেমন কোরে আমার দ্বারা সম্ভব হ’তে পেরেছিল, তা আজ আমি জানি!! যে কাল মায়ের বুক থেকে পুত্ৰশোকের ভারী পৰ্যন্ত হালুক করে দেয়, সে যে এই পাপিষ্ঠার মাথা থেকে তার অপরাধের বোঝা লঘু ক’রে দেবে, সে আর বিচিত্ৰ কি ? যে দণ্ড একদিন মানুষ অকাতরে মাথায় তুলে নৈয়, আর একদিন তাকেই সে মাথা থেকে ফেলতে পায়ূলে বঁচে। কালের ব্যবধানে অপরাধের খোচা যত অস্পষ্ট, যত লঘু হয়ে
পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৮
অবয়ব