মাঝে মাঝে সে হঠাৎ তর্কের মাঝখানে ভঙ্গ দিয়ে মামার মুখপানে চেয়ে গভীর বিস্ময়ে ব’লে উঠত, “আচ্ছা ব্রজবাবু, এই বয়সে এত বড় লজিকের জ্ঞান, তর্ক করবার এমন একটা আশ্চর্য্য ক্ষমতা কি আপনি একটা ফিনোমিনন ব’লে মনে করেন না?”
আমি গর্ব্বে, সৌভাগ্যে ঘাড় হেঁট করতুম। ওরে হতভাগী! সেদিন ঘাড়টা তোর চিরকালের মত একেবারে ভেঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েনি কেন?”
মামা উচ্চ-অঙ্গের একটু হাস্য ক’রে বলতেন, “কি জান নরেন, এ শুধু শেখাবার ক্যাপাসিটি।”
কিন্তু তর্কাতর্ক আমার তত ভাল লাগ্ত না, যত ভাল লাগ্ত তার মুখের মণ্টিক্রিষ্টোর গল্প। কিন্তু গল্পও আর শেষ হ’তে চায় না, আমার অধৈর্য্যেরও আর সীমা পাওয়া যায় না। সকালে ঘুম ভেঙ্গে পর্য্যন্ত সারাদিন একশবার মনে করতুম, কখন বেলা পড়বে, কখন নরেনবাবু আসবে।
এমনি তর্ক ক’রে আর গল্প শুনে আমার বিয়ের বয়স বারো ছাড়িয়ে তেরোর শেষে গড়িয়ে গেল, কিন্তু বিয়ে আমার হ’ল না।
তখন বর্ষার নবযৌবনের দিনে মজুমদারদের বাগানের একটা মস্ত “বকুলগাছের তলা ঝরা ফুলে-ফুলে একেবারে বোঝাই হ’য়ে যেত। আমাদের বাগানের ধারের সেই নালাটা পার হ’য়ে আমি রোজ গিয়ে কুড়িয়ে আনতুম। সে দিন বিকালেও, মাথার উপর গাঢ় মেঘ উপেক্ষা ক’রেই দ্রুতপদে যাচ্ছি, মা দেখতে পেয়ে ব’ললেন, “ওলো, ছুটে ত যাচ্ছিস্, জল যে এল ব’লে।”
আমি বলুলুম, “জাল এখন আসবে না মা, ছুটে গিয়ে দু’টো কুড়িয়ে আনি।”
মা ব’ললেন, “পোনর মিনিটের মধ্যে বৃষ্টি নামবে, সদু, কথা শোন—