পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী qo বুড়া বৈরাগী এই অভূতাবনীয় কাণ্ডে হতবুদ্ধি হইয়া চাহিয়া রহিল। বিদেশী ছেলেদের অকস্মাৎ এত ক্রোধের হেতু সে কিছুতেই বুঝিতে পারিল না। অপূর্ব বলিল, “গরীবের রক্ত শুষে খাওয়া তোমার বা’র কোবৃব, তবে ছাড়ব ।” নফর তখনও বসিয়াছিল ; তাহার কাছায়-বাধা পয়সা-দু’টো আদায় করার রাগে মনে মনে ফুলিতেছিল ; সে কহিল, “যা কইলেন কৰ্ত্তা, তা ঠিক। বৈরাগী নয়-পিচেশ ! চোখে দেখলেন তো কি কোরে মোর পয়সা দু’টাে আদায় নিলে ?” বুড়ার লাঞ্ছনায়, উপস্থিত সকলেই মনে-মনে নিৰ্ম্মল আনন্দ উপভোগ করিতে লাগিল। তাহাঁদের মুখের ভাব লক্ষ্য করিয়া বিপিন উৎসাহিত 'হইয়া চোখ টিপিয়া বলিয়া উঠিল, “তোমরা ত ভেতরের কথা জানো না-কিন্তু আমাদের গায়ের লোক-আমরা সব জানি । কি গো বুড়ো, আমাদের গায়ে কেন তোমার ধোপা-নাপতে বন্ধ হয়েছিল বোলুব ?” খবরটা পুরাতন। সবাই জানিত। একাদশী সাদগোপের ছেলেজাত-বৈষ্ণব, নহে। তাহার একমাত্ৰ বৈমাত্রেয় ভগিনী প্রলোভনে পড়িয়া কুলের বাহির হইয়া গেলে, একাদশী অনেক দুঃখে, অনেক অনুসন্ধানে, তাহাকে ঘরে ফিরাইয়া আঁানে। কিন্তু, এই কদাচারে গ্রামের লোক বিস্মিত ও অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া উঠে । তথাপি একাদশী মা-বাপ-মরা এই বৈমাত্র ছােট-বােনটিকে ক্লিছুতেই পরিত্যাগ করিতে পারে নাই। সংসারে তাহার। আর কেহ ছিল না ; ইহাকেই সে শিশুকাল হইতে কোলে-পিঠে করিয়া মানুষ করিয়াছিল ; তাহার ঘটা করিয়া বিবাহ দিয়াছিল ; আবার অল্প বয়সে বিধবা হইয়া গেলে, দাদার ঘরেই সে আব্দর যত্নে ফিরিয়া এ আসিয়াছিল ৷ বয়স এবং বুদ্ধির দোষে সেই ভগিনীর এত বড় পদস্থলনে বৃদ্ধ কঁাদিয়া ভাসাইয়া দিল ; আহার-নিদ্ৰা ত্যাগ করিয়া গ্রামে গ্রামে সহরে সহরে ঘুরিয়া, অবশেষে যখন তাহার সন্ধান পাইয়া তাহাকে ঘরে