পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বামী

যাসনে। এই অবেলায় ভিজে গেলে ঐ চুলের বোঝা আর শুকোবে না তা ব’লে দিচ্চি।”


 আমি বলুলুম, “তোমার দু’টি পায়ে পড়ি মা, যাই। বৃষ্টি এসে পড়্লে মালীদের ওই চালাটার মধ্যে গিয়ে দাঁড়াব।”—বলতে বলতে ছুটে পালিয়ে গেলুম। মায়ের আমি একটি মেয়ে—দুঃখ দিতে আমাকে কিছুতেই পারতেন না। ছেলে-বেলা থেকেই ফুল যে কত ভালবাসি, সে ত তিনি নিজেও জানতেন, তাই চুপ ক’রে রইলেন। কতদিন ভাবি, সে দিন যদি হতভাগীর চুলের মুঠি ধ’রে টেনে আনতে মা, এমন ক’রে হয় ত তোমার মুখ পোড়াতুম না।


 বকুল ফুলে কোঁচড় প্রায় ভর্ত্তি হ’য়ে এসেছে, এমন সময় মা যা বললেন তাই হ’ল। ঝম্ ঝম্ করে বৃষ্টি এল। ছুটে গিয়ে মালীদের চালার মধ্যে ঢুকে পড়লুম। কেউ নেই, খুঁটি ঠেস্ দিয়ে দাঁড়িয়ে মেঘের পানে চেয়ে ভাবচি, ঝম্ ঝম্ ক’রে ছুটে এসে কে ঢুকে পড়্ল। মুখ ফিরিয়ে চেয়ে দেখি—ওমা! এ যে নরেনবাবু! কালকাতা থেকে তিনি যে বাড়ী এসেছেন, কৈ, সে তো আমি শুনিনি!


 আমাকে দেখে চমকে উঠে বললেন, “অ্যাঁ, সদু যে! এখানে?” অনেক দিন তাঁকে দেখিনি, অনেক দিন তাঁর গলা শুনিনি, আমার বুকের মধ্যে যেন আনন্দের ঢেউ ব’য়ে গেল। কাণ পর্য্যন্ত লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠ্ল;—মুখের পানে চেয়ে ত জবাব দিতে পারলুম না, মাটীর দিকে চেয়ে বলুলুম, “আমি ত রোজই ফুল কুড়ুতে আসি। কবে এলেন?”


 নরেন মালীদের একটা ভাঙ্গা খাটিয়া টেনে নিয়ে ব’সে বললে, “আজ সকালে। কিন্তু তুমি কার হুকুমে ফুল চুরি কর শুনি?”


 গভীর গলায় আশ্চর্য্য হয়ে হঠাৎ মুখ তুলে দেখি, চোখ দু’টো তার চাপা হাসিতে নাচচে।