পাতা:স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান - সুন্দরীমোহন দাস.djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাধি প্রথার অনিষ্টকারিতা । yra সমাধিক্ষেত্রের নিকটবৰ্ত্তী স্থান অস্বাস্থ্যকর বলিয়া প্ৰসিদ্ধ। এই অনিষ্ট কিরূপে নিবারিত হইতে পারে ? বায়ুপ্রবেশ-পথ-বিহীন ইষ্টক গহবরে মৃতদেহ প্রোথিত করা যাইতে পারে ; তথায় পচনক্রিয়া বিলম্বে সাধিত হয়, বিকৃত দেহোৎপন্ন পদার্থ সমূহ বিলম্বে উত্থিত হয়, এবং বায়ু ও জল অল্প দুষিত হয়। কিন্তু এই প্রণালী অতি ব্যয়সাধ্য এবং সাধারণের অনুপযোগী।” “দাহ প্ৰণালী অনুসারে অতি অল্প সময়ে ও অল্প ব্যয়ে শবের সৎকার হয় ; ইহাতে কাহারও কোন প্রকার অনিষ্ট হয় না । এই দেশে শবদাহ। সমিতির তত্ত্বাবধানে উয়োকেং নগরের দাহ্যযন্ত্রে এক ঘণ্টায় সমুদয় ভস্মসাৎ হয়।” সুপ্রিসিদ্ধ সার স্পেন্সার ওয়েলস বলেন সমাধি প্রথা স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিরোধী ; সমাহিত শব্বজাত রোগ-বীজ মৃত্তিকায় বিনষ্ট না হইয়া বরং নিকটস্থ জল বায়ু দুষিত করে। এক ইয়েলো ফিভারে মৃত ব্যক্তির সমাধিভূমিতে তিনি ঐ রোগের ব্যাসিলাস প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। সেই ভূমির উপরে আবদ্ধ একটী জীব পঞ্চম দিনে মৃত হইয়াছিল এবং ইহার রক্তে ও টিশুতে ইয়েলো ফিবার ব্যাসিলাস প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছিল। ইয়র্কসিয়ারে একটা সমাধিতুমি খনন করিয়া নাকি ৩০ বৎসরের প্রোথিত স্কালে টিনা রোগীর শব্বজাত ব্যাসিলাস পাওয়া যায়। কেঁচো, কর্তৃক উৎক্ষিপ্ত সমাধি-মৃত্তিকার ব্যাসিলাস জল ও বায়ুর সহিত মনুষ্যদেহে প্ৰবেশ করিয়া নানা প্রকার সংক্ৰামক রোগ উৎপাদন করে । কিন্তু দগ্ধ শবের সঙ্গে সংক্ৰামক রোগ বীজ দগ্ধ হইয়া যায় । তাই সার স্পেন্সার ওয়েলস দাহের পক্ষপাতী। হিন্দু, মুসলমান, খ্ৰীষ্টান ও পার্শীদের শব্ব সৎকার প্রণালী তুলনা করিয়া সার উইলিয়ম মুর বলিয়াছেন, খ্ৰীষ্টানদের সমাধি প্রথা সৰ্ব্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট । ভারতের কোন স্থানে রেলপথ বিস্তার কালে কতিপয় ওলাউঠা রোগীর সমাধি খনন করিয়া নাকি শ্রমজীবীদের মধ্যে অনেকে ওলাউঠাক্রান্ত হইয়াছিল। কুইবেক নগরেও নাকি সেইরূপে বসন্তরোগীর সমাধি খনন করিয়া অধিকাংশ শ্রমজীবী বসন্তাক্রান্ত হয়। এই সমুদয় কারণে বের্ণমথ কংগ্রেসে সম্মিলিত পণ্ডিতমণ্ডলী এক বাক্যে দাহ প্রথার শ্ৰেষ্ঠতা স্বীকার করেন, এবং লণ্ডন স্বাস্থ্য মহা সমিতিতে সমবেত সুপ্ৰসিদ্ধ পণ্ডিতগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে সংক্ৰামক রোগীর শব। কখনই সমাহিত করা উচিত নয়।