পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫
পুরাতনী 

দিয়ে তবে কাপড় পরতে হয়। আর যখন দুধে দাঁত পড়তে আরম্ভ হল, তখন দাঁতটি হাতে করে নিয়ে একটা ইঁদুরের গর্ত খুঁজে ‘ইঁদুর, পড়া দাঁত তুমি নাও, তোমার দাঁত আমাকে দাও’ বলে সেই গর্তে ফেলে দিতে হত। এই কথাটা বিশেষ করে আমার মনে আছে এইজন্যে যে, বিয়ের পরে যখন বাকি দুধের দাঁতগুলি পড়ত তখন কলকাতার সেই পাকা ইঁট-চুনের বাড়িতে দাঁত ফেলতে ইঁদুরের গর্ত কোথায় খুঁজ্‌ব তা ভেবে পেতুম না। এখন সর্বদা শুনতে পাই যে, খোলা বাতাসে থাকা স্বাস্থ্যরক্ষার পক্ষে একটা বড় দরকারী জিনিস। আমি বাপের বাড়িতে যেরকম ঘরে থাকতুম তাতে দিনরাত খোলা বাতাসেই থাকা হত। বাড়ীর নিচের ভাগটা সমস্ত মাটি দিয়েই করা হত, এতটা উঁচু করা হত যে চার পাঁচটা ধাপ উঠে তবে মেঝেতে পৌঁছন যেত। আমাদেব উত্তরের ঘরটা সব চেয়ে বড় আর সবচেয়ে উচু ছিল, আরও বেশি ধাপ উঠে তাতে যেতে হত। প্রত্যেক ঘরের সামনে সমান লম্বা একটা বারান্দা ছিল, আর ঘরের চারিদিকটা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। সেই বেড়ার বাঁশ কিছুদিন ভিজিয়ে রেখে, লম্বাদিকে চিরে দুখানা করে সেই এক এক ভাগকে দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে সরু জালির মত করা হত। সেই জালি বাঁশের বেড়ার ভিতর দিয়ে আলো হাওয়া যথেষ্ট প্রবেশ করতে পারত, আবশ্যকমত জানালা দরজাও রাখা হত। কাঠের কপাটের উপর নানারকম ফুল পাতার তোলা কাজ নিজের নিজের রুচি অনুসারে করা হত। ঘরের উপরে বেশ পরিষ্কার কাটাছাঁটা খড়ের চাল থাকত। বারান্দার মেঝে রোজ সকালে গোবর মাটি জল গুলে লেপন করা হত, সমস্ত উঠোনটা গোবর মাটির ছড়া দিয়ে ঝাঁট দিয়ে বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হত। কোন জায়গায় আবর্জন জমা করে রাখা গৃহিণীর পক্ষে বড় লজ্জার বিষয় ছিল।

 আমার ছেলেবেলায় কতকগুলি জিনিসে খুব আমোদ হত। তার মধ্যে হরির লুট ছিল সবচেয়ে স্মরণীয় অনুষ্ঠান। নিজেদের বা অন্য