পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিশিয়ে গিয়েছে। দশ বৎসর আগে এমন দিনে সকালে উঠে শিয়ালদহে ট্ৰেণে চড়ে ৬০, মির্জাপুরের কাছে শেষ রাত্রির জ্যোৎস্নায় বিদায় নিয়ে ভোরের বাতাসে কচিপাতা ওঠা বসন্ত দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে রওনা হয়েছিলাম। সেই প্ৰথম বৃষ্টির সোদা সোদা ভিজা মাটীর গন্ধ-আরও আগেই সেই P. C. Roy-এর ওখানে নেমন্তান্ন, বৃন্দাবন চাকর-দেশে, ফিরে Scott-এর বই পড়তাম শুয়ে শুয়েজীবনের প্রথম-যাত্ৰী-বড় মধুর স্বপ্নমাখা সে দিনগুলো আমি জানি আমার কাছে যা মধুর বলে মনে হবে অপরের কাছে তার মাধুৰ্য্য বিশেষ কিছু বোঝা যাবে না।--তৰু ভবিষ্যতে এই ছত্ৰ কয়টি যদি কেউ পড়ে তবে সে যেন ভুলে না যায় যে জীবনের আনন্দ অতি রহস্যময়-কারে। কোনোদিনের স্মৃতি তুচ্ছ নয় । তারা যেন মনে রাখে ঐসব দিনগুলো এক গ্ৰাম্য বালককে যে সুখ একদিন দিয়েছিল দুনিয়ার রাজৈশয্য তার কাছে তুচ্ছ । সন্ধ্যা হয়েছে। বনঝাউগাছের বনের মধ্যে দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে ফিরে এলাম। বনঝাউগাছের মাথায় চতুর্থীর চাদ উঠেছে । অল্প অল্প মেটে জ্যোৎস্না এখনও ফোটেনি-নিৰ্জন কাশী জঙ্গল-বনবাউগাছ-মাথার ওপরে চাঁদ দ্রুতগামী ঘোড়া-বেশ লাগে । ৷৷ ২৪শে এপ্রিল, ১৯২৮ ৷৷ আজ আমার সাহিত্য-সাধনার একটা সার্থক দিন-এইজন্যে যে আজ আমি { আমার দুই বৎসরের পরিশ্রমের ফলস্বরূপ উপন্যাসখানাকে ( পথের পাচালী ) ‘বিচিত্ৰা’তে পাঠিয়ে দিয়েছি। ঘোড়াকরে বনের মধ্যে দিয়ে বেড়াতে গেলাম । খুব বন- খুব বন-এত বনের পথ আমার জানা ছিল না । সেই বনবাউ এর বনের মাথায় সুন্দর জ্যোৎস্ন! যখন উঠেছে, তখন ঘোড়া নিয়ে ধীরে ধীরে সোদা সোঁ দা গন্ধ আস্ত্ৰাণ করতে করতে ঘোড়া চালিয়ে দিয়ে এলাম। সুন্দর-অপূর্ব জ্যোৎস্নায় মনে ভাবছিলাম ভরতদের ঘরে বসতো যে বালকটি, কঞ্চি নিয়ে খেলা করত সে-এসব Egotism ছেড়ে এলাম। তবুও এই ঘোড়া চড়ে জ্যোৎস্না ওঠা জঙ্গলের মুদু সুভ্রাণ উপভোগ করতে করতে ঐ কথাটা কেবলই মনে হচ্ছে। ৷৷ ২৬শে এপ্রিল, ১৯২৮ ৷৷ | Co |