পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলছি-হেমন্তবাবু টেনে নিয়ে গেলো ম্যাচ দেখতে, সেখানে অনেকের সঙ্গে দেখা হ’ল। হেমন্তবাবু উকীল, যতীশবাবু ইত্যাদি । ওখান থেকে ফিরে দুজনে গেলাম হেমেনের কাছে। অনেকক্ষণ কথাবাৰ্ত্ত হ’ল। তারপর ক্লাবে গেলাম। বাসায় ফিরে অনেক রাত পর্যন্ত জোৎস্নাভিরা ছাদে বসে রইলাম একা । শুতে যেতে আর ইচ্ছা করে না । ইচ্ছে করে শুধুই বসে বসে এই দীর্ঘ নির্জন রাত্ৰি ভাবতে আর নানা রকম কল্পনা করে কাটাতে । আনমনে রটি বসি তন্দ্রাব্দীর্ঘ দিবসের অলস স্বপন-ভাটপাড়ার সেই বধু দুটি, যারা বিজয়ার দিনে আমাকে-সম্পূর্ণ অপরিচিত হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ করে ডেকে জলখাবার খাইয়েছিলেন--আজি হঠাৎ তাদের কথা মনে পড়ল। সত্যাকারের স্নেহ কি ভালবাসার ঘটনা বিফলে সায় না।--তাদের সে অনাবিল স্নেহের ফল এই হয়েছে যে তারা আমার মনে একদিনের জীবনপুলকের সঙ্গিনীরূপে স্থায়ী আসন পেয়েছেন। আজ এই প্ৰায় তিন বৎসর পরে এই দূর দেশে যখনই ভাবলাম তাদের কথা তখনই আনন্দ পেলাম । মোপাসার সেই পলাতক লক্ষ্মীছাড়া খুড়োর গল্পটা মনে এলসেই জাহাজের ডেকে ছোট ছেলেটি যখন তার হতভাগ্য নির্বাসিত খুড়োকে দেপলে তপন তার বালকহদায়ের সেই উচ্ছাসিত অথচ গোপন সহানুভূতিটুকু ! তাই মনে তোেল “সাহিত্যে এই ভাবজীবন ফুটানাের প্রচেষ্টাই আসল। সাধারণ মানুষের ভাবজীবন খুব গভীর নয়- অনেকের মন এমন ভাবে তৈরী যা কিনা কোনো বিষয়েই গভীরত্বের দিকে যাবার উপযোগী নয়। অথচ এই গভীরত্ব অভাবে জীবন বড় অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মনের এ দৈন্য অর্থে পূরণ হয়না, ঐশ্বৰ্য্যে নয়, সাংসারিক বা বৈষয়িক সাফল্যের সঙ্গে "তার কোনো সম্পর্ক নেই। এ সব অপূর্ব অনুভূতি আসে। অনেক সময় বিচিত্র জীবনপ্রবাহের ধারার সঙ্গে, উপযুক্ত গড়ে ওঠা মনের সঙ্গে । এই মোপাসার মত লোকেরা আসেন আমাদের এই বড় অভাবটা পূর্ণ করতে । তাদের ভাগ্যের লিখন এই, জীবনের উদ্দেশ্য এই । নিজের গভীর ভাবজীবনের গোপন অনুভূতির কাহিনী তারা লিখে রেখে যান উত্তরকালের বংশধরদের জন্যে। হতভাগ্য দীনহীন খুড়োর দৈন্তের করুণ দিকটা একদিন কোন বিস্তুত তুষারাবাঁ রাত্রে আগুনের কুণ্ডের আরাম কেদারায় বসে মোপাসার মনে হয়ে তার চোখে জল এনেছিল, আজ সর্বদেশের নরনারীর চোখে জল আনিছে- আজি কতকাল Sc