পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোন অংশে জানিনা অন্য সব যাত্ৰী, মাঝি-মাল্লাকে নামিয়ে দিয়ে জাহাজের অধ্যক্ষ অবশিষ্ট একটা মাত্র লাইফবোন্ট পরতে যাচ্ছেন- এমন সময় তঁর চোখে পড়লো জাহাজের এক কোণে এক ক্ষুদ্র অপরিচিত বালক শীতে ভয়ে ঠক ঠক কঁপিছে। সে একজন styaway-লুকিয়ে জাহাজে চড়ে কোথায় যাচ্ছিলএতদিন খায়নি, ভয়ে ও অনাহারে মুতপ্রায় হয়ে পড়েছে। মহানুভব পোতাধ্যক্ষ তাকে তঁর জীবনরক্ষার শেষ উপায়টা দিয়ে মৃতু্যর জন্য নিজে প্ৰস্তুত্যু হলেন এবং অল্পক্ষণেই বাঞ্চক্ষুব্ধ সমুদ্রের তরঙ্গের গর্ভে পোতসহ নিমজ্জিত হয়ে গেলেন । সেই কাপ্তেনের ছবিটা বেশ দেখতে পেলেম। পর্তুগালের কি স্পেনের কোন দ্রাক্ষালতার বনের ধারে বসে নীলনয়ন-বালক আপন মনে নির্জনে দূর দেশের স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতো—আটলান্টিক পার হয়ে অজানা দেশের ধনভাণ্ডার লুট করে তার দেশের নাবিকের প্রাচীন কোলে দেশকে ধনশালী করে ক্ষমতাশালী করে রেখে গিয়েছে।--তারও মনে মনে ইচ্ছা যে সেও একদিন সেইরকম হবে । কটেজ কি পিজারোর মত রাজ্যস্থাপয়িতা দিগ্বিজয়ী বীর নাবিক। তারপর তার দরিদ্র পিতামাতার কুটীরে পোড়ারুটি খেয়ে শুয়ে রাত্রে ঘুমের ঘোরে সে দূরের স্বপ্নে আকুল হয়ে উঠতো। পিতামাতার অনেকগুলো ছেলেমেয়ে, কেউ ভাল খেতে পায় না। শিক্ষার সুযোগই বা কে দেয় ? একদিন স্বপ্নের সৌন্দৰ্য্যে আকুল হয়ে বালক বাড়ী থেকে পালিয়ে চলে গেল। তার কেউ খোঁজখবর করলে না। ক্রমে সকলে ভুলে গেল তাকে । কেবল তার মা তাকে মনে রাখলে । ধৰ্ম্ম-মন্দিরে উপাসনার সময় সঙ্গীহীন, সেই নীলনয়ন পলাতক ছেলেটি তার ছিল নিত্যসঙ্গী ! কত নিৰ্জন রাত্রের চোখের জলে, রোগশয্যায় বিকারের ঘোরে তার কিশোর মৃত্তি চোখে পড়েছে। ম। যখন মারা গেল, ছেলে তখন শৈশবের তার স্বপ্নকে স্বার্থকতার মধ্যে পেয়েছে। কত কাল চলে গিয়েছে-ক’ত দেশের কত অদ্ভুত জীবন প্রবাহের মধ্যে দিয়ে সে বালক এখন প্রৌঢ় পোতাধ্যক্ষ । বিবাহ সে করে নি-বিশাল মহাসমুদ্রের তরঙ্গ-সঙ্গীত তার জীবনের বীণাকে চিরকাল রুদ্রতালে বাজিয়ে এসেছে । সংসারের কোন বঁাধন নেই তার । অচিনের অনন্ত পথ ছেলেবেলাকার মতই তার সামনে তবুও বিস্তৃত । ভীত, জড়সড়, ক্ষুদ্র বালককে দেখে সে মরণের রাত্রে তার নিজের দূর শৈশবের কথা মনে পড়ল। এই রকম অবোধ, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য বালক ছিল সে যখন প্ৰথম অজানার টানে সে বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই বালকও আজ সেরকম ed