পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি এই যাওয়া-আসা স্বপ্নে ভোর হয়ে বড় আনন্দ পাই। আবার যে আসতে হবে তারপর, তাও আমি জানি ! হয়ত একবার এসেছিলাম দূর কোন ঐতিহাসিক যুগে-হয়তো রোমের দ্রাক্ষালতার কুঞ্জের আড়ালে ভূমধ্যসাগরের নীলজলের তীরের কোন সন্ত্রান্ত ধনীর প্রাসাদে । হয়তো প্ৰাচীন গ্রীসের গৌরবের দিনে গ্ৰীকবীর হয়ে জন্ম নিয়েছিলাম, আলেকজাণ্ডারের সৈন্যদলে ঢালতলোয়ার ধনুক নিয়ে যুদ্ধ করেছি--নিয়তো কোন পাহাড়ের ছায়ায় বসে এইরকম স্বপ্ন দেখতাম-নয়তো ইংলেণ্ডে কি ফ্রান্সে কোন অবজ্ঞাত গ্রামে কৃষকবালক হয়ে জন্মেছিলাম-এলম কি ওক গাছের নীচে বসে বসে ভেড়া চরাতাম-কে জানে ? আবার বহুদূরে জন্মান্তরে হয়তো ফিরতে হবে। পাঁচশো বছর পরের সুয্যের আলোক একদিন অসহায় অবোধ শিশু নয়নদুটি মেলবো। পাঁচশো বছর পরের পাখীর গান, ফুলবন, জ্যোৎস্না, আবার আমাকে অভ্যর্থনা করে নেবে। কোন অজানা দেশের অজানা পর্ণকুটীরে কোন অজ্ঞাত দেশের অজ্ঞাত ছায়াঝোপের তলে মাঠে বনে মুগ্ধ শৈশব কাটবে-অনাগত মা-বাপের স্নেহসুধায় মানুষ হব । পাচশো বছর পরের অনাগত কত বালকবালিকা তরুণ-তরুণী, কত সুখ-দুঃখ-আশা। নিরাশা, লোকের সঙ্গে সে কত পুলক ভরা পরিচয়! : কেবলই মনে হয় সৃষ্টির যিনি দেবতা এত দয়া তার কেন ? এই অনন্তের সুধা-উৎস মানুষের জন্যে তিনি কতকাল থেকে খুলেছেন ? এই অন্ধকারে তবু হাতজোড় করে তঁাকে ধন্যবাদ দিই । ॥ »ध्ट्रे नऊश्रद्म, ७०२१ ॥ মানুষের সত্যিকার ইতিহাস কোথায় লেখা আছে ? জগতের বড় বড় ঐতিহাসিকগণ যুদ্ধ-বিগ্রহের বন্ধনায় সম্রাটু সম্রাজ্ঞী সেনাপতি, মন্ত্রীদের সোনালী পোষাকের জাকজমকে দরিদ্র গৃহস্থের কথা ভুলে গিয়েছেন। পথের ধারে আমগাছে তাদের পুটুলি-বাধা ছাতু কবে ফুরিয়ে গেল, কবে তার শিশুপুত্র প্রথম পাখী। দেখে সানন্দে মুগ্ধ হয়ে ডাগর শিশুচোখে চেয়েছিল, সন্ধ্যায় ঘোড়ার হাট থেকে ঘোড়া কিনে এনে পল্পীর মধ্যবিত্ত ছেলে তার মায়ের মনে কোথায় ঢেউ বইযেছিল। দুহাজার বছরের ইতিহাসে যে সব কথা লেখা নেই-থাকলেও বড় কম। রাজা যযাতি কি সম্রাট মেণ্ট হােটেপ জুলিয়াস সীজির, থিয়োডোসিয়াম এবং তাবৎ সম্রাট পরিবারের শুধু রাজনৈতিক জীবনের গল্প আমরা শৈশব থেকে মুখস্থ করে ¢ ክ”