পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আবার সে শান্ত জীবন আরম্ভ হয়েছে । কাল ও আজ আবার আজমাবাদের কুলবন দিয়ে পাকা কুল খেতে ঘোড়া ছুটিয়ে, সহদেব টোলার সেই তেলাকুচা ঝোপবনের ভেতর দিযে অস্তসূৰ্য্যের আলোয় ধীরে ধীরে গিয়ে কুতরুতোলা দিয়ে গঙ্গার ধারের দূরের পাহাড়গুলোর ধূসর দৃশ্য দেখতে দেখতে গঙ্গার ধারে গিয়ে নির্দিষ্ট স্থানটাতে ঘোড়া দাড করলাম। সন্ধ্যায় ধূসর আকার নদীজল পাহাড়, বহুদূরের দিকচক্রবাল কোন মাযাজগতের ইন্দ্ৰজালমষ স্বপ্নছবির মত অপরূপ দেখাচ্ছে । আবার সেই মাথার উপরে প্রায়ান্ধকার আকাশের প্রথম নক্ষত্রটি লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের জগতের অজানা কুহক নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছেশৈশবের বঁাশবনের গভীর রাত্রে লক্ষ্মীপেচার ডাকের মত গভীর রহস্যভর জীবনকে আবার ফিরে পেলাম । সন্ধ্যা হয়ে গেলে বাংলা গাছে পাশের সরু খালের পথ দিয়ে ঘোড়া ছুটিযে দিই, ক্ষেতে ক্ষেতে লোক গান গাচ্ছে, কলাইএর বোঝা মাথায় করে ক্ষেত থেকে ফিরছে-ভীমদাস টোলার ঘরের উঠানে কলাই এর ভূষায় আগুন করে গোল হয়ে লোকে বসে আগুন পোহাচ্ছে আর গল্প করছে, ঝন্ন টােলার ইদারায় মেয়েরা জল তুলছে-দেখতে দেখতে বাইরের মাঠে পড়ি, একটু একটু জ্যোৎস্না ওঠে, হু হু পশ্চিমে বাতাসে কনকনে শীত করে। বাঁধটার ওপর দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে দিয়ে ডানদিকের অস্পষ্ট দিকচক্রবালের দিকে চেয়ে চেয়ে দেশের কথা ভাবি-ঠাকুরমা, পিসীমা, বড় ঢারা আমগাছ। তলায়, নদীর ঘাটে কি করে আনন্দ ভোগ করে গিয়েছেন গত পুরুষের সে কথা ভাবি-জ্যোৎস্নাষি পথের পাশে বা আকন্দগাছ চক চক করে, ধুতুরার ফুল সুন্দর দেখায়-কাছারী এসে পৌছাই । ৷৷ ৩রা জানুয়ারী, ১৯২৮ ৷৷ একটু বেশী বোলা থাকতে আজ বেরিয়ে সুখটিয়ার কুলবনে এগাছে ওগাছে কুল খেতে খেতে বন ঝোেপ অস্তমান সুৰ্য্য আকাশে চতুর্দশীর চাদ, ঘুঘু মিথুন, সবুজ গমক্ষেত দেখতে দেপতে গিয়ে গঙ্গার ধারে গেলাম। চতুর্দশীর চাঁদের আলো গঙ্গার জলে অল্প অল্প পড়ে চিক্‌ চিক করছে।-ওপারের কুয়াশাচ্ছন্ন তীরভূমি দেখে হঠাৎ মনে হ’ল-আমি সুনীল ভূমধ্য সাগরের তীরে দাড়িয়ে দূরের কোনো দ্বীপের দিকে চেযে আছি-হাজার দুহাজার বছরকার আগেকার জীবনযাত্র। আবার যেন চোখে পড়ে-কত সম্রাট সম্রাজ্ঞী সেনাপতি মন্ত্রীর দল-থেস্দেশীয় সামান্য গৃহস্থঘরের শাস্ত সহজ জীবনযাত্রা, কত এলাম, ওক, ম্যাটল গাছের ছায়া, 熊。