পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা পাথরের ওপর বসে বসে দূর পাহাড়ের ওপরকার বঁাশবনের শোভা দেখলাম। পাহাডের ওপর অনেক কাঞ্চনফুল গাছে ফুটে আছে । সেখান থেকে তলা দিয়ে গিয়ে গিয়ে গভীর একটা বনের কাছে পৌছালাম । কল্পনা করছিলাম-চাবুকটা যেন আমার ধনুক-বটগাছের যে ডালটা ভেঙে নিয়েছিলাম সেটা যেন আমার বাণ । সভ্য জগৎ থেকে দূরে এক বন্য আদিম মানুষের জীবন যাপন করতে আমার বড় ভাল লাগে । তাই গাছ যেখানে বড় ঘন, ঝোপ খুব্ধ নিবিড়-তারই নীচে দিয়ে শুকনো পাতার ওপর দিয়ে মচ মচ করতে করতে যাচ্ছিলাম । এক জায়গায় দেখলাম পাহাড়ের ওপর বন্য বেতের গাছ হয়েছে-~~ এর আগে বটেশ্বর পাহাডে বন্য বেতের গাছ কখনও দেখি নি । অনেকক্ষণ পাথরটার ওপর বসে বসে কথা ভাবছিলাম-শৈশবে শুধু পিসিমা, হরি রায় এরাহ আমার সঙ্গী ছিল না । সেই সঙ্গে সঙ্গে সত্যভামা, ভীষ্ম, সাত্যকি, অশ্বখম৷ এই সব পৌরাণিক চরিত্রও আমার কাছে বড় জীবন্ত ছিল । আমাদের গ্রামে আশে পাশে বনে বাদাডে তাদেরও স্মৃতি শৈশবের সঙ্গে জড়ানো আছে যে ! রোদ রাঙা হয়ে এলে পাহাড থেকে নেমে নৌকায় উঠলাম । একটা ষ্টীমার সকাল থেকে চড়ায় আটকে আছে । একটা মেয়ে আমাদের সঙ্গে পার হচ্ছিল, তার বাপের সঙ্গে নতুন শ্বশুর বাড়ী যাচ্ছে ; ঘোমটা খুলে কৌতুহল চোখে ষ্টীমারটা দেখতে লাগিল । নিজে হাল ধরে নৌকা ঠিক ঘাটে লাগিয়ে দিলাম । রাম সাধোকে বললাম, তুমি ঝন্ন টােলা হয়ে চলে যাও । তারপর আমি ঘোড়া ছুটিয়ে নিজের অভ্যন্ত স্থানটিতে এসে দাঁড়ালাম ; কত কথা মনে হয়-সেই আড়ংঘাটাষ। বাবার সঙ্গে যাওয়া, সেই চাপাপুকুর, কত কি ? জীবনটা কি বিচিত্র, তাই শুধু ভাবি । সত্যবাবুদের বাড়ী থেকেও এর বিচিত্ৰতা যেমন দেখলামবাংলাদেশ থেকে বহুদূরে এই বিদেশে পাহাড় নদী বন গঙ্গা অস্তগামী বক্তসূৰ্য্যে বিচিত্ৰতার মধ্যেও তেমনি দেখছি । খুব অন্ধকার হয়ে গেল । আকাশ-ভরা তারার নীচে দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ঘাড়া ছুটিয়ে ভীমদাসটোলা দিযে বাধের ওপর দিয়ে কাছারী ফিরলাম । পথ দেখতে পাই ন-ঘোড়া শুধু আপনার ঝোকে কদমে চলে। শুধু আমি আর নির্জন মাঠ, একরাশ অন্ধকার, নতুন জিনটার মস মাস শব্দ ও মাথার ওপরে জলজলে বৃহস্পতি, দীর্ঘ ছায়াপথ । কাল সকালে এখানে থেকে ভাগলপুর ঘাবো । ॥ २झें ७iट्रद्धांौ. ७०२४ ॥ ዓ8