পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘কোই নাম আয়ী” অংশটা বার বার জোর দিয়ে গাইছে। গোষ্ঠ বাবুও মহা উৎসাহে কীৰ্ত্তন করছে। রামচরিত ভিজতে ভিজতে নওগাছিয়া ডাকঘর থেকে এসে বললে, চিঠিপত্তর কিছু নেই ! ৷৷ ২৭শে জানুয়ারী, ১৯১৮ ৷৷ আজি সবুজ গম রাইচা ক্ষেতে অনেকক্ষণ বেড়িয়ে এলাম । ফিরে এলে গোষ্ঠ বাবু ঘরে এসে অনেকক্ষণ গল্প করলে। ছটু সিংএর পাঠানে। পেয়ারা খাওয়া গেল। সন্ধ্যাবেলা অনেক দিন পরে দেশের কুঠার মাঠের একটা দিনের ঘটনার ছবি অস্পষ্ট মনে এল। নতুন বোষ্টমীর আখড়ার পেছন দিকের রাস্তাটা দিয়ে একদিন সকালে কুটার মাঠের দিকে যাওয়া । আটির নীচের ক্ষেতে কে নতুন চযেছে।--জ্যাঠামশায় না কে সঙ্গে আছেন-ফিরে এলাম । সে কি প্রথম দিনটা কুঠী যাওয়া ? ভাল মনে হয় না । সেই সময়ের মনের ভাবগুলো বেশ ধরা যায়। ঐ দিনটা স্পষ্ট মনে এলে ঐ দিনের-প চিশ বৎসর পুৰ্ব্বেকার শৈশবের এক হারানো দিনের ভাবনাটাও স্পষ্ট মনে পড়ে । দুটাে এক ফটোগ্রাফের প্লেটে তোলা ছবি একত্রে মস্তিকের কোথায় যেন আছে-এতদিন কত অন্য প্লেটের তলে চাপা পড়েছিল-আজি হঠাৎ হাত পড়েছে। ৷৷ ২৮শে জানুয়ারী, ১৯২৮ ৷৷ অপূৰ্ব্ব জ্যোৎস্না রাত্ৰি ! এরকম রাত্রি দ্বিারা ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না।--আর দেখা যায় বড় বাসার ছাদে। চারধার নিস্তান্ধ, সামনের কাশীবনের মাথায় দুগ্ধশুভ্ৰ জ্যোৎস্নাধৌত আকাশে প্রহস্যময় তারার দল। শুধুই মনে পড়ে, জীবনটা কি বিচিত্র রহস্য-এ শুধু একটা বিচিত্র, অনন্ত রহস্য, এর সব দিকেই অসীমতা-যেদিকে যাওয়া যায় । চাপাপুকুরের সেই যে বাড়ীটাতে নিমন্ত্রণ করেছিল, আমাদের গ্রামের সেই দশ-বিঘা দানের বাশবন, বড় চারা আম তলায়, জাঙ্গিপাড়ার স্কুলের সামনের মাঠে-এরকম জ্যোৎস্না পড়েছে আজ-- যখন এই সব বিভিন্ন স্থান ও তৎসংশ্লিষ্ট স্মৃতির কথা মনে ভাবি তখনই হঠাৎ জীবনের বিচিত্ৰতা প্ৰগাঢ় রহস্য আলাকে অভিভূত করে দেয় । সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ গিয়ে পড়ে অনন্ত আকাশের নক্ষত্ররাজির উপর-কে জানে ওর চারপাশের অন্ধকার গ্ৰহীদলের মধ্যে মধ্যে কি বিচিত্র জীবন-ধাৱা-প্রবাহ b”እ