পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্রোতের গতি

বালিকা ছাদের চিলের ঘরের কার্ণিশের ধারে উবুড় হইয়া পড়িয়া থাকিত। কখনও অন্ধকারে আমবাগানে গাছের তলায়, অথবা পুকুরঘাটের অব্যবহৃত ভগ্ন অংশে, লেবুগাছের ঝোপের আড়ালে লুকাইয়া থাকিত। সাপের ভয়, কাঁটার ভয়, ভূতের ভয়ও তার স্বামীর ভয়ের কাছে তুচ্ছ ছিল। পরদিন বাড়ীর লোকে যখন তাহাকে আবিষ্কার করিত, তখন সেই মৃত প্রায় ভয়ার্ত্তা বালিকার উপর স্বামীর যে অমানুষিক অত্যাচার চলিত, তাহা কোন মানুষে যে মানুষের উপর করিতে পারে, তাহা মনে হয়। বধূর ‘একগুঁয়েমি’র জন্য বিরক্তচিত্ত হৃদয়হীন সংসারের লোকেরাও তার রক্ষার উপায় দেখিত না— ছাড়াইয়া লইত না। পদাঘাতে মূর্চ্ছিতা, মৃতপ্রায় পত্নীকে ফেলিয়া রাখিয়া স্বামী যখন বীরদর্পে বাহির হইয়া যাইতেন, তখনও কেহ কাছে আসিয়া, একটা সান্ত্বনার ভাষা ব্যবহার করিত না। মেয়েমানুষের এত ‘গোঁ’—‘যেমন কর্ম্ম তেমনি ফল’—ইহাতে বলিবার কথা ছিলই বা কি?

 এমনি করিয়া জীবনের স্মরণীয় সুদীর্ঘ চারিটি বৎসর কাটাইয়া, চতুর্দশবর্ষীয়া সত্যবতী একদিন শুনিল, লাঞ্ছনা, নির্য্যাতন এবং সধবার সর্ব্ব-সৌভাগ্য হইতে নির্ব্বাসিত করিয়া তাহার অভাগা স্বামী তাহাকে চিরদিনের জন্যই