পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্রোতের গতি
১১৫

সে আর মনের মধ্যে প্রশ্রয় দিবে না ত—কিছুতে, কোন মতে না!

 অমিয়া বিছানার উপর বসিয়া প্রার্থনার ভাবে মনে মনে কহিল—“আমার কর্ত্তব্য, আমার প্রার্থনা, আমি যেন ভুলিয়া না যাই। হে ভগবান! স্বর্ণমৃগের প্রলোভনে ভুলিয়া আমার মন যেন দিগ্‌ভ্রান্ত হইয়া না পড়ে। প্রভু, আমায় বল দাও।”

 প্রার্থনা শেষে সে যেন অনেকখানি শান্তি অনুভব করিল। তবু অনিচ্ছায় ও অজ্ঞাতে তাহার চোখের জল ঝরিয়া পড়িল। মনে হইল—কর্ত্তব্যের কাছে সে যেন তাহার অনেক কিছুই বলি দিল।

 ভোরের দিকে ঘুমাইয়া সে স্বপ্ন দেখিল। দেখিল, জাহাজে চড়িয়া রণেন্দ্র যেন কোথায় চলিয়া যাইতেছেন, সে যেন বিদায় দিতে গিয়াছে। রণেন্দ্র অভ্যস্ত মিষ্ট হাসির সহিত চোখের জল মিশাইয়া যেন বলিতেছেন—“বিদায়—বন্ধু—বিদায় তোমার কাছে চিরদিনের জন্যই বিদায়।” জল কাটিয়া সফেন তরঙ্গদল দলিত করিয়া ক্রমেই যেন জাহাজখানি অস্পষ্ট হইতে হইতে দিগন্তে মিশাইয়া গেল। কেবল কাণে বাজিতে লাগিল—রণেন্দ্রর সেই অশ্রুজড়িত হাসিমাখা কণ্ঠের ধ্বনি “বিদায়—বিদায়!”