পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
স্রোতের গতি

 সত্যবতীর মুখে উদ্বেগচিহ্ন পরিস্ফুট হইয়া উঠিল। মেয়ে মাথা নাড়িয়া জানাইল—“না।” চোখের জল পাছে মাসীমার চোখে পড়ে, তাই মুখ না ফিরাইয়া বাহিরের দিকে চাহিয়া রহিল।

 এ ছলনাটুকু মাসীমার চোখে কিন্তু চাপা রহিল না। উদ্বেলিত নিশ্বাসটা জোর করিয়া চাপিয়া ফেলিয়া কহিলেন —“কাঙ্গালীরা বোধ হয় খাচ্চে, ওদিক্‌টায় ভারী গোলমাল হচ্চে, চল্ দেখি—দেখে আসি তারা সব পাচ্চে টাচ্চে কি না!”

 অমিয়া তাড়াতাড়ি হাত দিয়া চোখ মুছিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। সত্যবতী বাহিরে আসিলে সে তাঁহার অনুসরণ করিয়া চলিতে চলিতে কহিল—“দাদামশাই কাঙ্গালীদের খাওয়াতে কত ভালবাস্‌তেন—ও বচ্ছর পুরীতে যেদিন কাঙ্গালী-ভোজন করান হ’ল, দাদামশাই নিজে হাতে থালা নিয়ে, আমের ঝুড়ি নিয়ে সব পরিবেশন কর্‌তে লাগ্‌লেন। সেখানে কিন্তু বেশ—না মাসীমা? কম্ পড়্‌লে বাজার থেকে ভাত তরকারী কিনে আনা যায়। দ্রৌপদী বলে—ঠাকুরের প্রসাদ কণারত্তি মুখে দিলে পেট ভরে যায়। কৈ আমার ত তা যেত না, বরং সুমুদ্দুরের হাওয়া খেয়ে-খেয়ে এখানকার চার-ডবল খিদেই হ’ত-তোমার হ’ত না মাসীমা?”