পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্রোতের গতি
৪৭

একমাত্র মীনা। তা সে এক অদ্ভুত প্রকৃতির মেয়ে! নিজের ঘরসংসারের কাজ, ছেলে আর স্বামী লইয়াই আনন্দে দিনরাত মস্‌গুল হইয়া আছে। কখনো ভাবেও না যে সে একজন ক্রীতদাসী—পদদলিতা বিবাহিতা নারী! ঝীটি ও কি জুটিয়াছে তেমনি? স্বামী স্ত্রীতে দিনরাত খাটিয়া মরে, তাহাতেই যেন কত সুখী! মীনার স্বামী প্রাণতোষবাবু মানুষ অবশ্য মন্দ নহেন, দেখিতে শুনিতেও ভাল। কথাবার্ত্তা চাল চলনও সংযত স্নেহময়। সকল কাজে লোক দেখানো, মনভুলানো স্ত্রীর মতটি লওয়াও আছে। নিজেই যেন স্ত্রীর আজ্ঞাধীন—এমনি ভাব দেখাইয়া থাকেন,—কিন্তু ওসব ভূয়ো—সব ভূয়ো—আসল যা তাই। তিনি কাজের ছুতায় মধ্যে মধ্যে দূরে সহরে যান, দুই চারিদিন কাটাইয়াও আসেন। সেখানে—সভা-সমিতি ক্লাব, সবই হয়ত আছে। বেচারী মীনা—আহা নিজের অবস্থা হৃদয়ঙ্গম করিবার শক্তিও তাহার নাই।

 তবুও অমিয়ার সম্পূর্ণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও অজ্ঞাতে তাহার চিন্তার ধারা যেন ধীরে ধীরে পরিবর্ত্তিত হইতেছিল। এই পদদলিত নারী দু’টির অনাবিল অকৃত্রিম সুখে সহানুভূতিতে সে যেন নিজের অজ্ঞাতেই একটুখানি তৃপ্তি পাইতেছিল। বাড়ীর বাহিরে কাছাকাছির মধ্যে তেমন কেহ বড় নাই।