পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্রোতের গতি
৮৭

নারী-হৃদয়ে বাস করিতেছিল, তাহাকে সে অন্তরের বাহির করিয়া দিতে সমর্থ হয় নাই। সেই ক্ষুদ্র শিশুর স্নেহপাশে সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে নিজেকে সে যে এমনভাবে বন্ধ করিয়া ফেলিয়াছে, তাহা সে কখন কল্পনাও করিতে পারে নাই। খোকার পীড়ার সংবাদ পাইয়াই আচম্‌কা প্রথমেই তাহার মনে হইল—‘সর্ব্বনাশ! পীড়া যদি বেশী হয়! খোকা যদি না বাঁচে।’ নিজের এই হীন আশঙ্কায় নিজের প্রতিই সে মনে মনে বিরক্ত হইতেছিল। ছি ছি—এত দুর্ব্বলচিত্ত সে? তবু ভয় কমিতেছিল না।

 পার্ব্বতী বলিল—“বাবু সহর থেকে ডাক্তার আন্‌তে গিয়েচেন। কাকাবাবু বল্‌চেন জ্বরটি সোজা নয়, বাঁকা পথে যাবে।” তবে? অমিয়া ভাবিয়া পাইল না যে খোকার অসুখের সংবাদে সে এত ব্যাকুল হইতেছেই বা কেন? সংসারে ত অনেক খোকারই অসুখ হইয়াছে, কৈ, সে ত তাহাদের জন্য এতটুকুও ব্যস্ত হয় নাই। মনের এই দুর্ব্বলতাটিকে প্রশ্রয় দিবে না বলিয়াই সে আজ চেষ্টা করিয়া অনেক বিলম্বে খোকাকে দেখিতে গেল। কিন্তু মনের কাছে এ ছলনা সে বেশীদিন রাখিতে পারিল না। খোকার রোগের গতি ক্রমেই যেন বাঁকা পথে চলিতেছিল। বাড়ীর লোকে ভয় পাইলেন।