পাতা:হলুদ পোড়া - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৪ ' হলুদ পোড়া কিন্তু উপায় ছিল না। এত রাত্রে কে আর তাকে খাতির করবে। সুভদ্রাকে ভিতরে গিয়া দাড়াইতে হইল। সাধন বৈরাগী মুর্তা গেল না, . দু'চোখ বড় বড় করিয়া গানের বদলে একটা অদ্ভুত আওয়াজ করিতে sf3ţe l সুভদ্ৰা বলিল, “আমি গো আমি।” । তখন সাধন বৈরাগী শান্ত হইল। কিন্তু আবার অশান্ত হইয়া উঠিল অল্পক্ষণের মধ্যেই, আনন্দ ও উত্তেজনায় । প্ৰথমে সুভদ্ৰা ভাবিয়াছিল, রসিকের জন্য বোধ হয় একটু মন কেমন করবে। একটু যেন পছন্দ হুইয়াছিল রসিককে তার, দু'একদিন গভীর রাত্রে তার যেন মনেও হইয়াছিল, বেতাল বঁাশীর সুরে জানান দিয়া আজি কি রসিক আসিবে ? ভাসা ভাসা একটু রসজ্ঞান ছিল রসিকের, দুপুর রাতের গােপন মিলনে মাঝে মাঝে একটু রসের সঞ্চারও যেন সে করিতে পারিত । কিন্তু বহুদিন ধরিয়া যে ভাবে তার মন কেমন করিয়া আসিয়াছে এখনও তেমনিভাবে মন কেমন করিতে লাগিল বটে, সেটা রসিকের জন্য নয়। স্বামীর ঘরে ফেলিয়া আসা শাড়ী গয়নার মত রসিকও তুচ্ছ হইয়া গিয়াছে, এতটুকু আপশোষাও সুভদ্রার নাই। রসিক বলিয়া কেউ কি কোনদিন-তার মাথার চুলে হাত বুলাইয়া দিতে দিতে মৃদুস্বরে বর্ণনা কৱিত আসিবার সময় কোন বাড়ীতে নতুন বর ও বধুর ঘরে বেড়ার ফাকে উকি দিয়া একজনকে কি ভাবে আর একজনের পায়ে ধরিয়া সাধাসাধি করিতে দেখিয়া আসিয়াছে, আর শুনিতে শুনিতে তার মনে হইত। সে যেন হাল্কা হইয়া গিয়াছে, মুক্তি পাইয়াছে, চাচের বেড়ায় ঘেরা চারকোণা জেলখানায় জোরালো দু’টি বাহুর বন্ধন যেন তার আর নাই।