SO3 হলুদ পোড়া কিন্তু গান শিখতে ভাল লাগে না। সুভদ্রার, কিছুই ভাল লাগে না। দোকানে নিয়মিত কেনা-বেচা চলিতেছে, ভিতরে নিয়মিত ঘর-কান্না চলিয়াছে, নিজেই সে নিজের চারিদিকে সৃষ্টি করিতেছে নিয়মের ফাঁকি আর বন্ধন। যা-খুসী। সে করিতে পারে, কিন্তু যা-খুন্সী করিবে কি ? কি আছে যা-খুন্সী করার ? পথে দাড়াইয়া উলঙ্গ হইয়া নাচিবে ? সহরের পাশে যে নদী আছে তার স্রোতে ভাসিয়া যাইবে ? না, বিষ খাইবে ? সাধনকে সে মিনতি করিয়া বলে, “এখান থেকে পালাই চলে৮ এ্যা ? তেমনিভাবে ঘুরে ঘুরে বেড়াবা দু’জনে, কি মজাটাই হবে!” । সাধন বলে, “দূর পাগলি । ঘুরে বেড়ানোতে আবার মজা কি ?” তা ঠিক, ঘুরিয়া বেড়ানােতে হয় তো মজা লাগিবে না। সুভদ্ৰা এখন টের পাইয়াছে, সাধন বৈরাগীর সঙ্গে ক’দিন পথে পথে কাটানোর আসল, মজাটা কি ছিল। কি সুখ ছিল সে ঘুরিয়া বেড়ানোর ? কিছুই না। শুধু একটা উত্তেজনা ছিল, প্ৰতি মুহূৰ্ত্তের উত্তেজনা, পর মুহুর্তে বুঝি কিছু ঘটবে, জীবনে কিছু আবির্ভাব ঘটবে কোন কিছুর। ক্ষণে ক্ষণে তখন সব বদলাইয়া যাইত, মাটির পথের পর আসিত সুরকির পথ, হাট বাজারের পরে আসিত মাঠ, তুড়িখানার পরে আসিত দেব মন্দির, এক জনের কুৎসিত মন্তব্যের পর আসিত আরেকজনের সভক্তি প্ৰণাম, মুচির ঘরের আশ্রয়ের পর আসিত বড়লোকের বাগানবাড়ীর আশ্রয়। এই পৰিবৰ্ত্তন যেন প্রমাণের মতই আশা জাগাইয়া রাখিত, এ সমস্তের অতিরিক্ত আরও একটা নতুনত্ব নিশ্চয় আসিবে। সুভদ্ৰা কৃতাৰ্থ হইয়া। বাইবে, আর তার মন ছটফট করিবে না, উল্লাসে গদগদ হইয়া সেই নতুনত্বকে বরণ করিয়া বলিবে, এতদিন আসোনি যে বড়, আচ্ছা! খামখেয়ালী নিষ্ঠুর মানুষ তো তুমি ? O মানুষ ? সে নতুনত্ব কি তবে মানুষ সুভদ্রার ? ফাপরে পড়িয়াঃ
পাতা:হলুদ পোড়া - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৮
অবয়ব