পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
হারানাে খাতা।

পাইয়াই সেই কঙ্কালাবিশিষ্ট মুমূর্ষু ক্ষীণ কণ্ঠ হইতে প্রবল তীক্ষ্ণ স্বর বাহির করিয়া বদ্ধ জন্তুর অনুপায় হিংস্র গর্জ্জনের অনুকল্পে চেঁচাইয়া উঠিল, পোড়ারমুখি! অ-পোড়ারমুখি। এরই মধ্যে যে আবার ছুটে চলে এলি বড়? এবার যদি পয়সা না নিয়ে আমার ঘরে ঢুকেছিস তো এই মরতে মরতে উঠেও খেংরার চোটে পিঠের চামড়া খানা তুলে নেবো জেনে শুনে ঢুক্‌তে আসিস্। পোড়ারমুখী তোর আবার ভদ্দরআনির অত পটপটানি কেন্‌লা শুনি? লোকে ঠাট্টা করলে ওঁর লজ্জায় মাথা কাটা যায়। ওরে আমার লজ্জাবতী লতারে! এর পরে খাবি কি করে? দাসীগিরি করলেও যে কোন ভদ্দর লোকের ঘরে তোকে ঠাঁই দেবে না তা জান্‌চিস কিছু?”—

 সুষমা ছলছলে চোখে মায়ের কাছে ঘেঁসিয়া আসিয়া দাঁড়াইয়া অশ্রুগাঢ়স্বরে কহিল “রাজাবাবু গান শুনতে এসেছেন।”

 “ওমা! তাই বল! আসুন আসুন, কি সৌভাগ্য আমার, যে আমার মতন দীনের কুটীরে আজ পূর্ণচন্দ্রের উদয় হলো! ওমা, ও বেদানা। আসনখানা এনে রাজা বাবুকে পেতে দাও মা, পেতে দাও! আঃ এমন আধমরা হয়ে পড়ে আছি যে, উঠে বসে আপনাদের মতন মহাজনদের একটু সম্বর্দ্ধনা করে নেবো সেটুকুও শক্তি আমার পোড়াদেহে নেই।”

 নরেশ ও ননীলাল আসন গ্রহণ করিলেন, সুষমার গানও একটার পর একটা করিয়া তিন চারটে শোনা হইয়া গেল। গলা শুনিয়া নরেশের তো বটেই, এমন কি ননীবাবুরও আর এই সন্ধ্যাটাকে নিতান্তই ব্যর্থ বলিয়া বোধ হইল না। গান শুনিয়া নরেশ তরঙ্গিনীকে বলিলেন, “সুষমার এমন গলা ওকে কেন কোন থিয়েটারে দাওনি?”

 তরঙ্গিনী ফোঁস করিয়া একটা জ্বলন্ত নিশ্বাস ফেলিল, “দেখুন, রাজা সাহেব! পাপের পথে যতই এগিয়ে গেলুম, পাপের ভারে মন আমার