পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৯৭

 দয়া করে ওকে নিয়ে গিয়ে ম্যানেজারকে একটু বলে কয়ে দেন,— দেবেন কি?”

 নরেশ সুষমার মুখের দিকে চাহিতেই তাহার ভয়ত্রস্ত দুটি চোখের সঙ্গে তাঁহার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মিলিত হইয়া গেল। সেই শিশুর মত বালিকা-চক্ষের ভীতিপূর্ণ দৃষ্টিটুকু নরেশের পুরুষ চিত্তকে বিপুলবলে আকর্ষণ করিল। আহা এই কুপথ অনুসরণে একান্ত অনিচ্ছুক এই একান্ত অসহায় জীবনটাকে সে যদি আজ তুচ্ছ করিয়া ফেলিয়া যায় তাহা হইলে সে কি ইহার ভবিষ্যতের সমুদয় পাপ এবং তাপের জন্য সম্পূর্ণরূপেই দায়ী হইয়া থাকিবে না? তাহার বুদ্ধি তাহার বিবেক উচ্চৈঃস্বরে ডাকিয়া বলিল, “নিশ্চয়—নিশ্চয়—নিশ্চয়, তাহাকে,—শুধু একমাত্র তাহাকেই এই অসহায় জীবটীর সমস্ত দুর্দ্দশার জন্য এখানে নাই হোক, আর এক লোকের সব চেয়ে বড় দরবারে জবাবদিহী করিতে হইবেই হইবে। তখন সে বলিবে কি? ঘৃণা করিয়া সে ইহার দিকে চাহে নাই,এই কথা কি জোর করিয়া বলিতে পারিবে? ঘৃণা বাস্তবিকই তো ইহাদের তাহার করে না! তা করিলে ডালিমের গান শুনিতে এই বর্ষার রাত্রে বাহির হইয়াছিল কিসের জন্য? অবজ্ঞায় তুচ্ছ করিয়া চলিয়া আসিয়াছিলাম,—এমন কথাটা মুখ দিয়া বাহির করিতে, লজ্জায় কি মুখ ঢাকিতে ইচ্ছা করিবে না? তিনি যে এর আসন্ন বিপদের ঠিক সন্ধিক্ষণেই তাহার রক্ষা-হস্তের মধ্যেই এই অনন্যসহায় ভীরু দুর্ব্বল ক্ষীণ হস্তখানি টানিয়া আনিয়া তুলিয়া দিয়াছেন! কেমন করিয়া সে ইহার এত বড় দুর্দ্দশার দিনে ইহাকে ঠেলিয়া ফেলিয়া চলিয়া যাইবে? না সে তাহা পারে না।—মনুষ্যত্বের দিক দিয়া তো নয়ই, অমানুষ হইলেও নয়। সৃষ্টির মধ্যে যে কদর্য্য সৃষ্ট কাক,—তারাও সহায়চ্যুত কোকিল শিশুকে নিজের কুলায়ে লালন করে, ফেলিয়া দেয় না।