পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
হারানাে খাতা।

জন্য তোর করিয়া না দিতে পারিলে এদের জীবনই বা আশ্রয় পায় কোথায়? আজকাল তো অনেকেই মেয়ে বউদের গানবাজনা শিক্ষা দিতেছেন, এদের মধ্যে যারা পাপের পথ হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া সুপথে জীবিকার্জ্জন করিতে চায়, তাদের লইয়া যদি একটা সঙ্ঘ তৈরি করা যায়, অবশ্য বিশেষভাবে পরীক্ষা লইয়া,—তবেই ইহাতে প্রবিষ্ট করাইতে হইবে। তাহারা অন্তঃপূরিকাদের গানবাজনা শিখাইতে পারে। বৈষ্ণবীরা তো অন্তঃপুরে ভিক্ষা লইতে যায়, মিসরী মেমেদের সঙ্গে যে সকল দেশীয় খৃস্টান মেয়েরা যিশুর গান গহিয়া ও শেলাইবোনা একটু আধটু শিখাইয়া বেড়ায় তাদের মধ্যেও তো ঢের জিনিষ ছিল, ধর্ম্মশিক্ষার ও সঙ্ঘ-মধ্যের শাসন সংযমতায় তারাও সংযতভাবে চলিতে শিখিয়া অন্তঃপুর-শিক্ষার অধিকার লাভ করিয়াছে। তেম্‌নি এদের লইয়াও যদি একটা কর্ম্মশালা খোলা যায় মন্দ হয় কি? অত্যন্ত উৎসাহের সহিত নরেশচন্দ্র ওস্তাদ রাখিয়া সুষমাকে গানবাজনা ভাল রকমেই শিখাইতে লাগিলেন।

 হরিধন ঠাকুদ্দা তাহার তানপুরা সেতারের ওস্তাদ হইল, ননীবাবু হইল হারমোনিয়ম ও এসরাজের এবং একজন বুড়া হিন্দুস্থানী আসিয়া বীন্ শিখাইতে লাগিয়া গেল। ইংরাজী বাংলা লেখাপড়া শিখাইবার ব্যবস্থাও হইল। সমস্ত মনপ্রাণ ঢালিয়া দিয়া নরেশচন্দ্র আবর্জ্জনা ঠেলিয়া ফেলিয়া ধূলা ময়লা কাটাইয়া ইহার ভিতরকার খাঁটী সোনাটুকু ধুইয়া বাহির করিতে চাহিতেছিলেন। কয়েক বৎসর কাটিয়া গেলে দৈবাৎদৃষ্ট একটী বৃদ্ধ সাধুর প্রতি তাঁহার বড়ই শ্রদ্ধা জন্মিলে তিনি তাঁহাকে ইহার নিকট টানিয়া আনিলেন। মেয়েটীর ভিতরকার আগ্রহ ও সদিচ্ছা সাধুটীকেও বিগলিত করিল, তিনি সানন্দে ও সাগ্রহে উহাকে যখন তখন আসিয়া সংস্কৃত পরিচয় করাইতে আরম্ভ করিয়া