পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
হারানাে খাতা।

যাইতে যাইতে পূর্ণ কৌতূহলে জিজ্ঞাসা করিয়া বলিল, “কেন গা! ওকে কি আপনি চেনেন?”

 প্রৌঢ়া হাতমুখ নাড়া দিয়া কহিয়া উঠিলেন, “ওমা, তা আর চিনিনে? ও যে কোথাকার এক খেতাবী রাজার রাখা মেয়েমানুষ। ওর সঙ্গে কি আর ভদ্দর ঘরের মেয়েদের কথা কইতে আছে মা?”

 সুষমার মনে হইল, তাহার চোখের সামনে সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরিতেছে। আলোকময় জগৎ যেন তমসাবৃত হইয়া গেল।

 নরেশচন্দ্র ও কিছুদিন হইতে এই সম্বন্ধীয় জ্বালা নেহাৎ কমও ভুগিতেছিলেন না। বন্ধু বান্ধবদের কথা ছাড়িয়া দিলেও সুহৃদ ও হিতকামীর দলও তাঁহাকে মধ্যে মধ্যে অল্প বিস্তর ভৎসনাপূর্ব্বক এই সর্ব্বনেশে নেশার হস্ত হইতে মুক্ত করিতে চেষ্টা করিয়া আসিতেছিলেন। দেশ হইতে বিমাতা হঠাৎ এক চিঠি লিখিয়া পাঠাইছেন—তাহার মর্ম্ম এইরূপ—বিশ্বস্তসূত্রে জানিলাম তুমি একটা পতিতার সঙ্গ লইযা উন্মত্ত হইয়াছ, তাহার পায়েই সর্ব্বস্ব ঢালিয়া দিতেছ, তাকে রাণীর বাড়া করিয়া রাখিয়াছ। এ সব কি ভাল? অবশ্য তোমাদের মত বড় লোকের ঘরে সবই সাজে, তথাপি বিবাহ না করিয়া শুদ্ধমাত্র হীনসঙ্গে কাটাইলে চলিবে কেন? বংশবক্ষা করা ত চাই। ও সব যা আছে থাক্; তা না হয় এর সঙ্গে একটী বউ আন, সব গোল চুকিয়া যাক্। যদি তোমার মত হয় আমার বোনঝি চামেলীর সঙ্গে তোমার বিয়ের দিন স্থির করি। চামেলীকে ছোটবেলায় বোধ করি দেখিয়াছ? বড় হইয়া আরও সুন্দরী হইয়াছে। দিব্য ডাগর মেয়ে, তোমার সঙ্গে অসাজন্ত হইবে না।

 এই চিঠি পাইবার পর নরেশের দ্বিধাগ্রস্ত মন যেন সম্পূর্ণরূপেই তাহার নূতন চিন্তাধারারই অনুবর্ত্তন করিয়া একেবারে স্থিরসঙ্কল্পে