পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১০৯

বিবাহ করা অনুচিত, এবং দুষ্ট ব্যাধিগ্রস্তদের বিয়ে করা মহাপাপ, তেমনি আমাদেরও এই বিষাক্ত শরীরের রক্ত দিয়ে জীব সৃষ্টির মত মহাপাপ আর সংসারে কোন কিছুই নেই। আমার মায়ের রক্ত আমার মেয়ের মধ্যে যদি—”

 জোর করিয়া হাত ছাড়াইয়া লইয়া সুষমা দু হাত দিয়া মুখ ঢাকিল।— “আর বলবেন না, আমি পারচি না, হয়ত দুর্ব্বল সামান্য স্ত্রীলোক লোভে পড়ে যাব। কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনার সন্তান আমার রক্তের দোষে হয়ত—হয়ত—হয়ত ঐ পাপপথে ঐ হীন বৃত্তিতে—ওঃ ভগবান! ভগবান! এমন যেন না হয়।”

 সুমার সুগভীর হতাশার মর্ম্মান্তিক বিলাপ, মর্ম্মের একান্ত প্রাণফাটা অসহায় আর্ত্ততার মধ্যে মিশিয়া অস্ফুট হইয়া গেল। দুহাত-দিয়া-ঢাকা মুখ সে নিজের দুই জানুর মধ্যে লুকাইল।

 সুষমা চাহিয়া দেখিল না; কিন্তু তাহার অঙ্কিত এই ভয়াবহ চিত্র নরেশের বুকের মধ্যেও বোধ করি একটা সংশয়ের আঘাত করিয়াছিল। তাঁহার এতক্ষনকার সতেজ দৃষ্টি ও প্রসন্ন ভাব পরিবর্ত্তিত হইয়া আসিয়া এক্ষণে তাহার স্থলে কেমন যেন একটা সন্দেহাকুল চলচ্চিত্ততা জাগিয়া উঠিয়াছিল।

 কতক্ষণই এইভাবে কাটিয়া গেল। দেয়ালে একটা বড় ঘড়ি টাঙ্গান ছিল। তার পেণ্ডুলেমটা একটা ভ্রমরের গঠনের, একটা পদ্ম ফুলের কাছে সেই ভ্রমরটা ক্রমাগত ডানা মেলিয়া আনাগোনা করিতেছে, কিন্তু যেন প্রত্যাখাত হইয়া হইয়া ফিরিয়া যাইতেছিল, তাহারই ব্যাকুল আবেদনের সুরে রাত্রি দশটা বাজিয়া গেল।

 তখন যেন নিদ্রোত্থিত হইয়া উঠিয়া নরেশচন্দ্র সুষমার দিকে চাহিয়া ডাকিলেন “বেদানা!”

 “আজ্ঞে!”