পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১১৭

 নিরঞ্জন এক পা এক পা করিতে করিতে কোন্ সময় একবারে ইহার গায়ের কাছ গিয়া পড়িয়াছিল। মেয়েটী ইহার সঘন নিশ্বাসের শব্দে বারেক চাহিয়া দেখিল; তারপর ঘাড় ফিরাইয়া হাত দশেক দূরের একটা গাছ তলায় তাহার বিশ্বাসী দ্বারবানকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া নিশ্চিন্ত মনে যে গান গাহিতেছিল তাহাই গাহিতে থাকিল। নিরঞ্জনকে প্রথম দৃষ্টিতেই তাহার পাগল ভিন্ন আর কিছুই বোধ হয় নাই। সে গাহিল—

“বিপদ সম্পদের তরে, দিতে পরম পদ তারে,
ওমা, বিপদ নৈলে জন্মান্ধ জীব ডাকে না তোরে;—
মা, তোর করুণার ফল, বিপদ কেবল, জাগায় অবোধ বালকে।”—

 এ গান শুনিয়া নিরঞ্জন চুপ করিয়া থাকিতে না পারিয়া আচম্‌কা বলিয়া উঠিল, “একি সত্যি কথা, না খালি গান?”

 মেয়েটী গান বন্ধ করিয়া মুখ ফিরাইয়া মধুর স্বরে জিজ্ঞাসা করিল “কি সত্যি কথা বাবা?”

 কম বয়সী মেয়েটীর মুখে এই গম্ভীর সম্বোধনটা তাপদগ্ধ ছন্নছাড়া নিরঞ্জনের আরও মিষ্ট লাগিল। সে মনে মনে পুলকিত হইয়া উঠিয়া আবার ছেলে মানুষের মতন প্রগলভ প্রশ্ন করিয়া বসিল। “ওই যে বল্লেন, ‘বিপদ সম্পদের তরে’, একি সত্যি?”

 নারী কহিল, “হ্যাঁ বাবা! খুব সত্যি।”

 নিরঞ্জন কহিল “আপনি কখনও বিপদে পড়ে কি এর সত্যতা যাচাই করে নিতে পেরেছেন?”

 সে কহিল, “পেরেচি বই কি। বিপদ সঙ্গে করে নিয়েই তো আমি জন্মেছিলুম, কিন্তু দিনকের দিন যত বিপদ ঘন হয়ে এল, ততই সম্পদও নিকটতর হতে লাগ্‌লো। শেষে যখন সর্ব্বনাশ এসে