পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১২৩

কর্ব্বার হিসাব রাখবার জন্য রাখাই যাক্ না কেন? একটা কাজ তো ওকে দিতে হবে।”

 হাস্যের কল ঝঙ্কারে চারিদিকে মুখরিত হইয়া উঠিল। পরিমল বেদম হাসি হাসিয়া বলিল “হ্যাঁ তাই দাও। আমি হরির লুট মেনেচি, তুমি ওকে যাতে নিজের কাজে লাগাও তারই জন্যে। তা হলেই তোমার হিসাবের কড়ি আর বাঘেও খেতে পারবে না।”

 নরেশচন্দ্র ও প্রখমটা তাহার হাসিতে যোগ দিলেন, তারপর একটু আগ্রহান্বিত হইয়া উঠিয়া হঠাৎ প্রশ্ন করিয়া বসিলেন “সত্যি কি নিরঞ্জন বড় বেশী অন্যমনস্ক?”

 “তুমি দিন কতক পরীক্ষা করেই দেখ। আমার মাথা খাও।”

 নরেশ কহিলেন “তাই দেখবো, প্রেসের ম্যানেজার বোধ হয় চল্লো। যে কদিন নতুন না পাই ওকেই সঙ্গে নিয়ে চালাব।”

 পরিমল পরম পরিতোষ লাভ করিল, সম্বন্ধটা অন্য রকম না হইলে হয়ত বলা যাইত প্রাতর্বাক্যে তাঁহাকে রাজা হওয়ার জন্য আশীর্বাদ করিল, এক্ষেত্রে তা অবশ্য করিল না; কিন্তু বিশেষ রকম যত্ন করিয়া সে স্বামীর কপালের ঘাম নিজের শান্তিপুরে সাড়ীর আঁচল দিয়া মুছিয়া দিল। ‘কত ঘামচো?’ বলিয়া ঘরে ইলেকট্রীক পাখা খোলা থাকা সত্ত্বেও নিজের আঁচল ঘুরাইয়া তাহাকে হাওয়া দিতে লাগিল এবং আরও পতি সেবার কি কি খুঁটিনাটি সমাধা করিতে মনোনিবেশ করিয়া দিল, তার খবরে কাজই বা কি?

 কিন্তু দুদিন যাইতে না যাইতেই বুঝিতে পারা গেল যে, নিরঞ্জনের কাছে বিদ্যাশিক্ষা করিতে যাওয়ার মধ্যে অসুবিধা তার যতই থাক না কেন, বুঝি আনন্দও একটুখানি কোথায় যেন ছিল। সেই আপ্‌নাভোলা অসহায় ও নিঃসঙ্গ জীবটাকে সে যে ঘণ্টাখানেকেও একটুখানি কাজ