পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা
১৩৭

 আহার সমাধা করিয়া তাড়াতাড়ি সে বেশভূষা সমাপ্ত করিয়া লইল। সুষমা বড় একটা লোকসমাজে বাহিৱ হয় নাই। ভদ্রলোকের বাড়ী যাওয়া জীবনের মধ্যে এই তার প্রথম। কাপড়ের ট্রাঙ্কটা খুলিয়া ফেলিয়। সর্ব্বপ্রথম তাহার ভাবনা হইল কি পরিয়া সে আজ বাহির হইবে? যতদিন সুষমা ছোট ছিল চাঁদনির বাজারে কেনা ফরিদপুরী ছিটের ফ্রক ই একমাত্র তাহার জন্য কিনিয়া দেওয়া হইত। বৎসরে একবার পূজার সময়ে একটা সিল্কের পোষাকের মুখ সে দেখিতে পাইয়াছে। তের বৎসর বয়স হইলে প্রথম সে সাড়ী পরার জন্য আবেদন জানায়, তারপর হইতে বঙ্গলক্ষ্মীর সবচেয়ে মোটা ও কম দামী সাড়ী, টাটা মিলের মার্কিণের সেমিজের সঙ্গে সে আটপৌরে পরিবার জন্য পাইয়া আসিয়াছে। পূজায় একখানা ঢাকাই, শান্তিপুরে নেহাৎ অল্প দামের বাজে বেনারসী এই রকমই কিছু পাইত। সেখনি সে দু’ একদিন পরিয়া সযত্নে ভাঁজ করিয়া গুছাইয়া তাহাতে দু’একটী কর্পূরের চাক্তি আনাইয়া দিয়া রাখিয়াছিল। এই শেষ তিন বৎসর নরেশ তাহাকে পূজার কাপড় কিনিয়া দেন নাই, খরচের টাকা এই তিন বৎসর তার নামে মনিঅর্ডারে আসে। রাজবাড়ীর সরকার দরওয়ানেরা আর তাহার মাসকাবারী বাজার করিয়া দিয়া যায় না। কাপড় সে পূর্ব্বের মতই কেনে, পূজার সময় নিজের চাকরদের কাপড় কিনিয়া দেয়, নিজের জন্য কেনে না। মনে মনে এই কথা বলিয়া মন তাহার বিমুখ হইয়া থাকে যে, ওরা আমার চাকর তাই ওদের আমি দিচ্ছি, আমি যার দাসী তিনি যখন আমায় দিলেন না, তখন আমার কাজ কি?

 তাই আজ বহুকাল পরে ধূলাপড়া ট্রাঙ্কের ডালা তুলিয়া সে চুপ করিয়া তার অনেক দিনের পরিত্যক্ত ঐশ্বর্য্য ভাণ্ডারটীর পানে অনেকক্ষণই চাহিয়া থাকিল। এক একটী সাড়ী জ্যাকেটের ভাঁজে ভাঁজে যেন তার এক