পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
হারানাে খাতা

একটি অতীত বৎসরের স্মৃতির স্তূপ সঞ্চিত হইয়া রহিয়াছে। সে ঠেলিয়া উহাদের যেন নাড়া দিতেও তার বুকে বাজিতেছিল। তারপর অল্পে অল্পে সহাইয়া সহাইয়া এক একটি করিয়া সে সেগুলিকে মাটিতে নামাইতে লাগিল। এই গোলাপী ডুরে সাড়ীখানি সর্ব্বের প্রথম বৎসর তিনি নিজে হাতে করিয়া দিয়াছিলেন! সুষমা কাঙ্গালের মতন সেখানিকে গায়ে বুকে যেন আলিঙ্গন করিয়া ধরিয়া বারম্বার উহাতে চুম্বন করিল। যেন ইহাতে আজও সেই দাতার হাতের সৌরভ টুকু পর্য্যন্ত লাগিয়া আছে,—এমনি আগ্রহে উহার ঘ্রাণ লইল। সে কাপড় পরা চলিবে না— উহা আবার সযত্নে সাবধানে যথাস্থানে রক্ষিত হইল। আর একখানি সাড়ী তার সঙ্গের জ্যাকেটটীর উপর দৃষ্টি পড়িতেই সুষমার বুকের যুক্ত যেন হিম হইয়া আসিল। কালীঘাটের মহিলা সভার সেই জ্যাকেট সাড়ী! গভীর ঘৃণায় ন্যক্কারজনক জঘন্য বস্তুর ন্যায় সে তাল পাকাইয়া সে দুটাকে বাক্সের মধ্যে দু’ আঙ্গুলে ধরিয়া ঝুপ্ করিয়া ফেলিয়া দিল। সে দিনের দুষ্টা স্মৃতি তার দেহ যে দিন ভস্মাবশেষ হইয়া যাইবে, সেই ছাইএর মধ্য হইতেও বুঝি মিলাইবে না। নিজের জন্য যত না হোক, সে যে তার আশ্রয়দাতার কত বড় গ্লানির মূল, সে দিন বড় আঘাতেই সে পরিচয় যে সে পাইয়াছে! তার আগে, স্বপ্নেও যে তেমন সম্ভাবনা তার মনের কোণেও কখন জাগে নাই! জাগিলে—কি করিত?—বলা যায় না। তার দেবতার চিত্তে তার এই ব্যথা বোধ যে বিশেষভাবেই আছে, অন্ততঃ এটুকু জানিবার পূর্ব্বে এত বড় লজ্জাকর সংবাদটা তার কর্ণগোচর হইতে পারিলে নিঃসন্দেহ সে নিজেকে বাঁচিয়া থাকিতে দিতে পারিত না। কিন্তু এখন? আত্মহত্যার অধোগতি তার এই অধোগতিতে প্রাপ্ত জীবনের শেষ সঞ্চয় করিয়া লইতে যত না মায়া হয়, তার চেয়ে বেশী মনে লাগে,