পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৩৯

তার শোচনীয় মৃত্যু নিশ্চয়ই নরেশকে যে বেদনা দিবে তাই ভাবিয়া।

 একখানি ভোমরাপেড়ে শান্তিপুরে সাড়ী ও একটি সাদা সিল্কের ব্লাউজ পরিয়া নিজের গলায় পরা একমাত্র সম্পত্তি এক নল সরু গোট হারটুকু জামার উপর তুলিয়া দিতে হঠাৎ কি মনে হইল। ছোট আরসিখানি পাড়িয়া সে নিজের মুখ দেখিল। তারপর আবার কি ভাবিয়া সেই জ্যাকেট সাড়ী ও হারটুকু খুলিয়া ফেলিয়া আটপৌরে মোটা সাড়ীর সঙ্গে একটি পাবনা ছিটের চেককাটা রংজলা হাতাবড় অ্যাকেট পরিয়া সাজসজ্জা সমাধা করিল। হাতে রহিল দুই গাছি করিয়া ক্ষয়প্রাপ্ত ও হাতের সঙ্গে আঁটিয়া বসা সোনার চুড়ি। এক সময় উহাদের বরফির মতন কাটুনি ছিল, কিন্তু এখন সে সব নিশ্চিহ্ন হইয়া গিয়াছে ও দু’ এক গাছার মুখ ছুটিয়া গিয়াছে।

 নূতন ও সম্পূর্ণরূপে অনাস্বাদিত জীবনের মধ্যে প্রবেশলাভ করিতে পাইয়া সুষমার আনন্দের আর অবধি রহিল না। এত দিনে যেন জন্ম সফল হইল বলিয়া তার মনে হইল। মায়ের শেষ ও প্রধান ইচ্ছা যে অংশতঃ পূর্ণ হইতে পারিয়াছে ইহা মনে করিয়া তাহার মনে সুখ ধরিতেছিল না। মা যে নিজের পথ হইতে সযত্নে তাহাকে দূরে সরাইয়া রাখিয়া তাহার আজিকার এক আনন্দময় জীবনের পথটুকু প্রস্তুত হইবার সুযোগ দান করিয়া গিয়াছেন এই মনে করিয়া সে তাহার উপর একটুখানি কৃতজ্ঞতা বোধ করিল। নতুবা মায়ের উপরের অভিলাষ যে তাহার কত বড় তাহা সে নিজেও যেন পরিমাপ করিতে সমর্থ হয় না। যাহারা নিজেদের পাপ দিয়া সম্পূর্ণরূপে নিরপরাধে অপর জীবনকে কলঙ্ক কালি মাখাইয়া পৃথিরীর নগ্নবক্ষে কঠিন বন্ধুর ধুলিশয্যায় শোয়াইয়া দেয়, তাদের অপরাধের তুলনা আর কোন কিছুরই সঙ্গেই কি হইতে