পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
হারানাে খাতা।

 যে খাতাখানার কথা সেদিন পরিমল তার স্বামীর কাছে বলিতেছিল, সেখানার মধ্যে মধ্যে নিরঞ্জন নিবিষ্ট হইয়া কি লিখিত। সেটার আর ছিল এই রকম—

 এই মলাট-ছেঁড়া চার পয়সা দামের খাতাখানা হাতে পেয়ে আজ হঠাৎ ডায়রি লেখার কথা মনে পড়ে গেল। মনে যে পড়লো তা সেটা কিছু আর বিচিত্র নয়! কতকালেরই যে অভ্যাস ছিল। কিন্তু নয়ই বা কেন? আমার এ জীবনটার সকলই যে বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে পূর্ব্ব সংস্কারগুলো এখনও যে কেমন করেই না মরে গিয়ে বেঁচে আছে এবং সুযোগ পেতেই মাথা তুলে খাড়া হচ্ছে, এইটেই তো ঘোর আশ্চর্য্যের বিষয়! নিজেই আমি অবাক হয়ে গিয়ে ভাবচি যে তাহলে আমার দ্বারা এখনও আবার এ পৃথিবীর কোন কোন কাজ কর্ম্মও চালিয়ে নিলে চলে! আশ্চর্য্য, ভারি অশ্চের্য্য লাগ্‌ছে কিন্তু।

 “আচ্ছা, আমি আগে কি ছিলুম, সেটাও একটু একটু করে মনে কর্ব্বার চেষ্টা করা বোধ হয় নেহাৎ মন্দ নয়! যা’ ছিলুম আর এখন যা’ হয়ে দাঁড়িয়েছি এ থেকে আমিই আমার নিজেকে বিশ্বাস করতে পারিনে, তা আর পাঁচজনে কেমন করে পারবে? কিন্তু সে পারবার কিছু দরকারও ত নেই। সে লজ্জা আমি আমাকে যে কোন মতেই দিতে পারবো না।—না, না, আমার অতীত। আমার সোনার স্বপন! আশার আনন্দে উৎসাহে সম্মানে ভালবাসায় ভরা আমার বাল্য কৈশোর যৌবনের অতীত! যত মাধুর্য্য যত আকর্ষণই তোমার মধ্যে থাকে থাক, তুমি শুধু আমার ধ্যানধারণার মধ্যেই লিপ্ত হয়ে থাক। পথের ভিখারী নিরঞ্জনের কাছে তুমি ঐশ্বর্য্যমণ্ডিত রাজপ্রাসাদের মত গোপন আকাঙ্ক্ষার ধন হয়েই থাক, এই কর্কশ বন্ধুর শুষ্ক বর্ত্তমানের মধ্যে টেনে নিয়ে এসে আমি তোমায় আঘাত করবো না, লজ্জা দেব না।