পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৫১

 “নিজের কথা ভাব্‌তে গেলেই মনে হয় এর আগে যে জন্মটা আমার চলছিল, সেটা যেন শেষ হয়ে গিয়ে এখন আর একটা নূতন জন্ম চলছে। আর বস্তুতঃও তো তাই! আমার সে জন্মে আমার চেহারাখানা ঠিক কার্তিকের মতন নাই থাক্, ঘরে পরে সবাই যে আমার রূপের তারিফ করেছে, সে তো আমি নিজের কানেই শুনেছি। আর এখন, আমায় দেখলে লোকে শিউরে উঠে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আবার ছোট ছোট ছেলেরা ভয়ে কেঁদে ফেলে— পালিয়ে যায় সেও আমি জানি। জন্ম আমার ঠিকই বদলে গেছে, তবে এবারে জাতিস্মর হয়ে জন্মেছি বলেই এত জ্বালা। পুরানো কথা মধ্যে যেন কিছুদিন ভুলে গিয়েছিলেম, তেমনি বরাবরের জন্য একেবরেই যদি ভুলে যেতেম, সে যেন ঢের ভাল হতো। তবে দুঃখ এই যে, জন্ম নতুন পেলেও এবারে আর কচি ছেলেটী হয়ে জন্মে মারবুকে ঠাই পেলেম না। আর একটু একটু করে বাড়্‌তে গিয়ে ছেলেরা যে অবসরটুকু পেয়ে নেয়, সেও আমার ভাগ্যে যুটলো না।—একবারে এই বাজপড়া তাল গাছের মতন আমাকে নিয়ে আমার এই নবীন জন্ম আরম্ভ হলো!

 “আচ্ছা, বাড়ী ছিল আমাদের চট্টগ্রামের যে দিকটায়, সে সবই তো দেখছি ঠিক ঠিক মনে পড়ে যাচ্চে! মধ্যে কিন্তু এসব কথা এমন করে মনে করতে পারতাম না। আমার ঠাকুরদা মশাই শুনেছি নেহাৎ নির্ব্বিরোধী ভদ্রলোক ছিলেন। তাঁর এক বিশ্বাসী (!) আমলার কারসাজীতে পড়ে সমস্ত জমিদারীটি হারিয়ে ফেলে মনের দুঃখে এইখানে এসে বাস করতে থাকেন, এই আমার মার কাছে শুনেছি, তার আগে তিনি গাজন হাটের এগার আনির জমিদার ছিলেন।

 “আমার বাবাকে আমার বেশ স্পষ্ট করেই মনে আছে। ফরসা রং, দেড়হারা পাতলা লম্বা চেহারা, খুব গম্ভীর প্রকৃতির লোক ছিলেন, কি