পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানো খাতা।
১৫৩

কি ঘনিষ্ট যোগই যে সে হয়েছিল। এত ভালবাসা বোধ হয় আর কারুকেই কখন বাসতে পারিনি, আর না,—বাসতে পারবোও না। এখন কি আর সে ভালবাসবার শক্তিই আমার মধ্যে আছে? মন ছিল তখন একটা কাদার তালের মতন, তাকে রকম বেরকম করে ছাঁচে ঢেলে নিলেই হলো। এখন হয়েছে সে একখানা নিরেট পাথর। তাকে ভাঙ্গাও যায় না, গড়াও যায় না।

 “কালীপদ আমায় প্রাণ দিয়ে ভালবেসে ছিল বটে; তবু আমার মতন নয়। সে তার জীবনের মস্ত বড় কথাটাই আমার কাছে লুকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু আমি হলে তা’ পারতুম না। যাকে ভাসবাসলেম, তার সঙ্গে যদি একটা মস্তবড় আড়ালই রেখে দিলেম, তাহলে আর প্রাণে প্রাণে যোগ হবে কোনখান দিয়ে? গঙ্গাযমুনার মধ্যভাগে যদি একটা প্রকাণ্ড পাহাড় গেঁথে ওঠে, তাহলে যুক্তবেণীর সব মহিমাই যে তুচ্ছ হয়ে যায়! কালীপদর যে আমায় না জানানো গোপন কথা ছিল, সে আমি জানতে পারলেম একেবারেই অসময়ে।—যেদিন পুলিসের লোকে আরও কজন ছেলের মধ্যে তারও ঘর তোলপাড় করে’ একটা ছোট্ট রকম বোমার সরঞ্জামের সঙ্গে তাকেও ধরে হাতে হাতকড়ি দিয়ে ও কোমরে বেঁধে নিয়ে চলে যায় সেই ঘোর দুর্দ্দিনে। আমাকেও দুদিন একটু টানাটানি করেছিল; কিন্তু নিতান্ত অজ্ঞ বুঝে শেষটা ছেড়ে দিলে।

 ‘পদ’র সঙ্গে শেষ দেখা তার আন্দামানে যাবার আগের দিন। দেখা হতেই খুব হাসিমুখে এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে কোলাকুলি করলে। হাত তার বাঁধা। দণ্ডিত অপরাধী পাছে কিছু করে বসে—তার কিন্তু সে মতলবই নয়। খুব প্রফুল্ল হয়ে সোৎসাহে অনেক কথাই সে অনর্গল বলে গেল। তারপর সব্বের শেষ অনুরোধ আমায় এ জন্মের মতই সে জানিয়ে দিলে।