পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
হারানাে খাতা।

ঠেকাইতে গিয়া হঠাৎ সুষমার লক্ষ্য হইল, উপরের হস্তাক্ষর নরেশচন্দ্রের নহে এবং খামখানা অন্যছাঁদের। চিঠি লিখিবার লোকের বালাই তাহার কোনখানেই তো নাই, কে লিখিল তাহাকে এই চিঠি! এই কথা ভাবিতে ভাবিতে মোটা খামখানা সে মাথার কাঁটা দিয়া খুলিয়া ফেলিল। সম্পূর্ণরূপেই অপরিচিত হাতের লেখা, আর সম্পূর্ণরূপেই অবমাননাজনক ইহার বর্ণবিন্যাস! ক্রুদ্ধ এবং বিস্মিত হইয়া চারি পৃষ্ঠা চিঠির শেষে নামের স্বাক্ষরটা উল্টাইয়া দেখিতে গেল। সেখানে লেখা আছে—“তোমার একান্ত দর্শনাভিলাষী সুরেশ্বর বসু।” চিঠির উপরে এ বাড়ীর ঠিক পাশের বাড়ীর নম্বর দেওয়া রহিয়াছে। তখন মিঃ গুহর কথা তাহার স্মরণ হইল। তাহার প্রতিবেশী সুরেশ্বর বোসকে সে চেনে কিনা এই প্রশ্ন তিনি তাহাকে সেদিন কহিয়াছিলেন এবং সুরেশ্বর মিঃ গুহর বন্ধু। প্রচণ্ড ক্রোধে তাহার ব্রহ্মরন্ধ্র অবধি জ্বলিয়া গেল। অতি সামান্য পঠিত পত্রখানা সে মর্দ্দিত করিয়া ফেলিয়া দিতেছিল, আবার কি ভাবিয়া তাহা গদির তলায় তদবস্থাতেই রাখিয়া দিল। সে পত্রে যে সব কথা লেখা হইয়াছে তাহার আভাস দু’চার পংক্তির মধ্যেই পাওয়া যায় এবং সেদিন মিঃ গুহের মুখে সে কথা শুনিতেও তো তার বাকি নাই। রাজা নরেশচন্দ্র তাহাকে যে ভাবে রাখিয়াছিলেন এবং যাহা হইতে এক্ষণে বঞ্চিত করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তদপেক্ষায় অনেক বেশী সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে তাহারা উহাকে রাখিতে প্রস্তুত, ইত্যাদি অনেক কথাই সেই পত্রে লেখা আছে। পত্রখানা, নরেশকে দেখান উচিত বোধেই সে ছিঁড়িয়া ফেলিল না।

 কানাই সিং বিস্তর রাগারাগি করিয়া তাহাকে রাঁধাইতে না পারিয়া বিষম ক্রোধে গজ গজ করিতে করিতে উঠিয়া গেল, “তা’হলে আমিও আজ আর রুটি বানাবে না। এমন করে রোজ রোজ উপোস দিলে যে তোর