পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৬৫

জন্য পাগল, কেবল নরেশের বন্ধুত্বের খাতিরেই এতদিন চুপ করিয়াছিলেন। তাঁর স্ত্রী এখন মারা গিয়াছে।—সুষমার রূপ ধ্যান করিয়াই তিনি আর নূতন করিয়া সং সাজিতে পারেন নাই।”

 কানাই সিং ঈষৎ ক্ষুব্ধভাবে ফিরিয়া আসিয়া জানাইল, “আজ নয়, আপনি কাল আসিবেন।” এদের উদ্দেশ্য সেও এখন বুঝিতে পারিয়াছিল এবং সুষমার কার্য্যে তার বুক অহঙ্কারে ভরিয়া উঠিয়াছিল। এবার তাহা চূর্ণ হইতে বসিল, ভাবিয়া সে মর্ম্মে আহত হইল।

 ডাক্তারকে বিদায় দিয়া বিষণ্ণচিত্তে নিজের খাটিয়ায় বসিয়া পড়িয়া সবেমাত্র উচ্চারণ করিয়াছে “সীতারাম। সীতারাম!”—এমন সময় উপর হইতে ডাক আসিল “সিং-জী!”

 মুখভার করিয়া কানাই গিয়া নিরুত্তরে কাছে দাঁড়াইল। বিস্মিত হইয়া দেখিল, ঘরের মেজেয় বসিয়া সুষমা চোখ মুছিতেছে, বোধ করি কাঁদিতেছিল। তাহাকে দেখিয়াই সে আহত-শিশুর ন্যায় ডুকরিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া মর্ম্মবিদারীস্বরে যেন আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিল “সিং-জী, ভাইয়া। আরতো আমি এদেশে থাকতে পারচিনে, আমায় তোমার দেশে তুমি নিয়ে চলো।”

 কানাই সিং এই দুদিনের ব্যাপারে মনে মনে অত্যন্ত চটিয়াই ছিল। সে যেমন প্রীত তেমনি ক্রুদ্ধ হইয়া রুখিয়া উঠিল “বউয়া! তুই কাঁদিস্‌ নে, তুই হামার বেটী আছিস, বেটীসে বড়্ করে আমি তোকে মেনিছি, আমি তোর হুকুম পেলে ওই দুষমণ্-বাবুদের নাক ভেঙ্গে দিতে পারি। তুই হুকুম দে, দেখি তোকে কোন জানোয়ার কাঁদাতে আস্‌তে পারে।”

 সুষম কাঁদিতে কাঁদিতে প্রবলবেগে মাথা নাড়িয়া বলিল “না কানাই ভাইয়া! কারুকে আমি কিছু বলবো না ওদের দোষ কি? ওরা