পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৬৭

প্রভাবান্বিত রাখে, তেমনি তাঁর মহিমাজাল তখনও আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে গৌরব বিস্তৃত করিতেছিল। নরেশচন্দ্র নিজের আফিস ঘরে দু’একজন কর্ম্মচারীর সহিত কাজকর্ম্ম দেখিতেছিলেন; এইবার উঠি উঠি করিতেছেন, এমন সময় কানাই সিং দ্বারে দাঁড়াইয়া বরকতক কাশিয়া নিজের পরে তাঁহার দৃষ্টি আকর্ষিত করিয়া লইল এবং তারপর দীর্ঘ সেলাম ঠুকিয়া ডাকিল “মহারাজ!”

 “কে? কানাই সিং?—যুগল! পালমশাই! আজ আমি এইবার উঠি, কাল আর একবার ঐ খসড়াটা ভাল করে দেখেশুনে দেওয়া যাবে।”

 নরেশ কানাই সিংয়ের কাছাকাছি হইয়া নিম্নস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন “তোমাদের খবর ভাল তো কানাই সিং?” হাতে চিঠি আছে কিনা উদ্বিগ্ন চোখে দেখিয়া লইলেন।

 কানাই সিং দুঃখিতভাবে মাথা নাড়িয়া জানাইল, “খবর কাঁহা কুছু আচ্ছা হায় মহারাজ! বউয়াজী বহুত তক্‌লিবসে হ্যায়। হাম উন কো সাথ্ করকে হিঁয়া লে আয়া।”

 “নিয়ে এসেছ! তাকে!—” নরেশ যেন ভয়ত্রস্তভাবে চমকিয়া উঠিলেন।—“কি হয়েছে তার? আমায় খবর দিলেই হোত।”

 কানাই সিং সুষমাকে সত্যসত্যই ভালবাসিয়াছিল, একেই সে সুষমার প্রতি মহারাজের ব্যবহারকে প্রশংসা করিতে কোনমতেই সমর্থ হইতেছিল না, তার উপর ইঁহার সুখ ঐশ্বর্য্যের প্রাচুর্য্য অথচ সুষমার অর্থাভাবে অবমাননাজনক চাকরী করিতে যাওয়া, বিশেষ তাহারই পরিণামে এত দুঃখভোগ, তাহার মনকে অত্যন্তই তিক্ত করিয়া তুলিয়াছিল। এক্ষণে সুষমার আগমন সংবাদে নরেশকে বিপন্নভাবাপন্ন দেখিয়া সে আর ধৈর্য্য রাখিতে পারিল না। মনীবের মর্য্যাদা ভুলিয়া গিয়া সে অভিমান-পরিপূর্ণ