পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
হারানাে খাতা।

বিরক্তস্বরে জবাব দিল, “মহারাজ! হুকুম ফরমাইয়েতো হাম হামারা বউয়াজীকো আপনা দেশপর—যাঁহা হামার বেটী পুতৌ হায়, হুঁয়াই লে চলে?—লেকেন গরীব পরবর!—গরীবকা বাচ্চা কো উপ্র এইসা বেখেয়াল হোকে রহ্‌না ঠিক বাত নেই হ্যায়!”

 ভৃত্যের নিকট তিরস্কৃত হইয়া নরেশচন্দ্রের চিন্তা-বিপন্নতা গভীর লজ্জায় পর্য্যবসিত হইয়া আসিল। আত্মচিন্তায় বিরত হইয়া তখন আস্তে আস্তে উহাকে প্রশ্ন করিলেন “সুষমা কোথায়?”

 গাড়ীর মধ্যে ফটকের বাহিরে আছে শুনিয়া তিনি তৎক্ষণাৎ কানাই সিংয়ের সহিত অগ্রসর হইলেন।

 পিছনে কর্ম্মচারী দুজনের মধ্যে যুগল তখন নিম্নস্বরে অপরজনকে সম্বোধন করিল “ব্যাপারখানা শুনলেন তো পাল মশাই! বাইজী সাহেব যে বাড়ী চড়োয়া হয়ে এসে উপস্থিত হলেন দেখছি! আসা যাওয়া কমেছে কি না, অম্‌নি গেরো কষতে বাড়ী বয়ে ছুটে এসেছেন।”

 পালমশাই চক্ষের ইঙ্গিত করিয়া মুচকি হাসির সহিত টিপ্পনী কাটিল “ভাইরে! ওরা হল জলের কুমীর। ওদের দাঁতের মধ্যে যার গর্দ্দান খানা গিয়ে পড়েছে, সে কি আর কখন তা’ বার করে নিতে পারে? এতো আর তোমার রাঘব বোয়াল নয় যে ফের উগ্‌রে দেবে!”

 “এইবারেই আমাদের রূপসী-রাণী ঠাক রুণটীর সিংহাসন টলমল হলো বোধ হয়। যা হোক ভাই, আমার কিন্তু একবারটী ওর রূপখানা কোন রকমে দেখে চক্ষু দুটো সার্থক করে নিতে হবে। শুনেছি নাকি মাগীটা আরমানী বিবি?”

 পাল কহিল “দুর্ ছোঁড়া! আরমানী কেন হতে যাবে?—সে যে আদত কাশ্মীরী।”