পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
হারানাে খাতা।

আমন্ত্রণ নিরুদ্ধ রাখিয়া সেও উৎসুকনেত্রে উঁহার হাস্যলেশহীন গম্ভীর এবং উৎকণ্ঠিত মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। ভরসা করিয়া যেন কোন প্রশ্নই করিতে পারিল না।

 নরেশ একবার তাহার দিকে চাহিয়া ‘এসো’ বলিয়াই নীরবে ঘরের মধ্যে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। গলার স্বরে কোন কিছু অভাবনীয় ঘটনার আভাস পাইয়া পরিমল চমকিয়া উঠিল, শঙ্কিতমুখে উৎকণ্ঠিস্বরে জিজ্ঞাসা করিল “কি হয়েছে?”

 নরেশ ঘরের মধ্যে আসিয়াই পরিমলের দিবানিদ্রা উপভুক্ত বিছানাটার একধারে বসিয়া পড়িয়াছিলেন, পরিমল নিকটে আসিতেই নিজের পাশে তাহাকে জায়গা দিয়া সন্দেহশঙ্কিতস্বরে বলিয়া উঠিলেন, “পরিমল। আজ আমাদের মস্ত বড় পরীক্ষার দিন। তুমি যদি আজ অকপটে আমার সাহায্য করে, তবেই আমি রক্ষা পাই।”

 পরিমল কোন অনাগত অমঙ্গলের আশঙ্কায় একেবারে অবসন্ন হইয়া গিয়া কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করিল, “কি করবো বলো?”

 নরেশচন্দ্র অনেকক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন,—কি করিয়া কথাটা আরম্ভ করিবেন তিনি যেন তার ভাষাই খুঁজিয়া পাইতেছিলেন না, তাঁহার উৎসাহ ও দৃঢ়তাপূর্ণ চিত্ত অকস্মাৎ যেন এই মুহূর্ত্তে অত্যন্ত দুর্ব্বল হইয়া পড়িল। পরিমলের অবস্থাও এই সময়টুকুর মধ্যে যেন উহার চেয়েও শোচনীয় হইয়া দাঁড়াইয়াছিল, কি শুনিবে সে যে তার কোন আন্দাজই করিতে পারিতেছিল না।

 অনেকক্ষণ পরে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া নরেশ তাঁর বক্তব্য কথাটা বলিতে আরম্ভ করিলেন,—“একটী অনাথ মেয়ে সংসারে অনেক নিগ্রহ ভোগ করে আমাদের দ্বারস্থ হয়েছে, তুমি যদি তাকে দয়া করে একটু খানি আশ্রয় দাও।”