পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৭১

 বুকে চাপিয়াধরা প্রবল আতঙ্কটা যেন একখণ্ড স্বচ্ছ লঘু শরৎ মেঘের মতই সরিয়া গেল। স্বামীর বিষয় চিন্তিত মুখের উপর কৌতুকপূর্ণ সহাস্য দৃষ্টি স্থাপিত করিয়া সে ভর্ৎসনার স্বরে কহিয়া উঠিল, “ও মাগো! কি মানুষ তুমি! আমি বলি কি না জানি হয়েছে!” বলিয়াই স্বামীর কাছে সরিয়া গিয়া তাঁর গলাটা দুহাতে জড়াইয়া ধরিয়া সুখের আবেগে গলিয়া পড়িয়া বলিল, “তা’বলে অতটা হিংসুটে আমায় তুমি মনে করো না! এতলোকে তোমার বাড়ী আশ্রয় পাচ্ছে। আর সে মেয়েমানুষ বলেই আমি বুঝি তাকে রাখতে দিলে হিংসেয় বুক ফেটে মরে যাবো, এই তুমি মনে করলে? বেশতো রাখ না তাকে এক্ষণি থেকে রাখ না। কোথায় আছে সে?”

 নরেশ স্ত্রীর নিবিড় আলিঙ্গনের এবং অজস্র অনুতপ্ত আদরের মধ্যে অপরাধ বিব্রত হইয়া পড়িয়া তাহার দিকে না চাহিয়াই চট করিয়া বলিয়া ফেলিলেন, “এর সব ভার তোমায় কিন্তু নিজের হাতে এখন থেকে নিতে হবে। আমি না বুঝে এতদিন ওকে আশ্রয় দিয়েছিলাম, আর তার ফলেই আজ ওর এই বিপন্ন দশা। তুমি এবার ওকে সেই দুর্দ্দশার হাত থেকে বাঁচিয়ে তোমার স্বামীর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবে, কেমন পরি-রাণি!”

 পরিমল নিজের আনন্দ-স্মিত দৃষ্টিতে কোতুক ও কৌতুহল ভরিয়া কি কথা বলিতে গিয়াই যেন কোন্ নুতন পথের চিন্তাধারায় আর একধারে চলিয়া গেল। হঠাৎ সে কি ভাবিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া বসিল, “মেয়েটির নাম কি?”

 স্ত্রীর কণ্ঠস্বরের পরিবর্ত্তন লক্ষ্য করিয়া নরেশ যেন একটুখানি থতমত খাইয়া ঢোক গিলিয়া বলিলেন “সুষমা তার নাম, সে—

 পরিমলের আদরভরা বাহুর বাঁধন শিথিলমূল হইয়া তাহার স্বামীর কণ্ঠ হইতে সহসা বিচ্যুত হইয়া পড়িল। শুষ্ক ফুলের মধ্য হইতে যেমন করিয়া