পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
হারানাে খাতা।

কঠিন ফলের গুটি বাঁধিয়া উঠে, তেমন করিয়া তাহার আনন্দ বিকশিত প্রফুল্ল মুখের সমুদয় রেখা যেন সেই মুহূর্ত্তেই অত্যন্ত কঠোর হইয়া দেখা দিল। সে নরেশের সান্নিধ্য হইতে দূরে সরিয়া গিয়া দৃপ্তভঙ্গিতে মুখ তুলিয়া ত্বরিতকঠে কহিল “আমার বদলে যদি রাজা ভুবনমোহন মল্লিকের মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে, তাহলে কি আজ আমার কাছে যে কথা বলতে পারলে, সেই কথা তার কাছেও তুমি তুলতে পারতে? নিতান্ত গরীব বলেই না আমায় তুমি তোমার রক্ষিতার সঙ্গে একত্রে বাস কর্ব্বার কথা বলতে দ্বিধা পর্য্যন্ত কর্‌লে না। কিন্তু জেনো, গরীব হলেও আমি ছোট লোকের মেয়ে নই যে একটা দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক আমার সঙ্গে একবাড়ীতে থাকতে পারবে।”

 নরেশ এই অপ্রত্যাশিত ক্ষুব্ধ স্বরের তীব্র তিরস্কারে যেন অবাক হইয়া গেলেন। সুষমার পরিচয় যে ইহারও নিকট কিছুমাত্র গোপন নাই, মায় তাহার নামটা শুদ্ধ—এ খবর তাঁর জানা ছিল না; তাই এই কথার ঘায়ে তাঁর যেন সকল আশাই একসঙ্গে ভাঙ্গিয়া পড়িল এবং তিনি মনে মনে অতিশয় বিরক্ত হইলেও লজ্জায় ম্রিয়মাণ হইয়া ক্ষণকাল সুষমা সম্বন্ধে নিজের অবিমৃষ্যকারিতার অনুতাপ ধিক্কারে নীরব হইয়া থাকিয়া পরে আবেগপূর্ণকণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন—

 “তুমি যদি আমায় একটুও ভালবেসে, এতটুকুও শ্রদ্ধা করে থাক পরিমল! তা’হলে নিজের অভিমান ছেড়ে দিয়ে আমার এই বিপদের দিনে আমার সহায় হও। পরের মুখে অনেক কথাই শুনা যায়, তার মধ্যে অনেক অসত্যও থাকে; আগে সকল কথা নিরপেক্ষভাবে জেনে শুনে তার বিচার করে তবেই রায় দিতে হয়। সুষমাকে আমি এতটুকু কচি মেয়ে কুড়িয়ে নিয়ে এক রকম মানুষ করেছি। তার জন্ম অপবিত্রা মায়ের গর্ভে; কিন্তু নিজে সে অতি পবিত্র, তাকে একপাশে একটু স্থান