পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৭৩

দিলে তোমার বাড়ী নিতান্তই কলঙ্কিত হবে না। যে সব ঝি চাকরানীদের তোমার বাড়ীতে ঢুকতে দাও, তাদের সঙ্গে ওর তুলনাও হয় না।”

 পরিমল স্বামীর বেদনাহত ও অত্যন্ত সঙ্কুচিত কণ্ঠস্বর শুনিয়া একবারটী যেন নিজের মনের মধ্যে একটা ঘোরতর দৌর্ব্বল অনুভব করিয়া ফেলিয়া ছিল। পরক্ষণেই কিন্তু তাহার সেই সব পুরানো কথা মনে পড়িয়া গেল। সৎ শাশুড়ী, বৈমাত্র-ননদ, অন্নদা ঝি সবাই যে এ বাড়ীতে পা দিতে না দিতেই তাহার এই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীটীর সংবাদ তাহাকে শুনাইয়া দিতে এতটুকুও বিলম্ব করিতে পারে নাই। শাশুড়ী এমন কথাও আভাসে ইঙ্গিতে জানাইয়াছিলেন যে, “নরেশের তো বিয়ের সাধে বিয়ে করা নয়; নেহাৎ লোক দেখাবার জন্য একটা বউ এনে ঘরে পুরে রাখা। সুষমা বলে তার যে বাইজি আছে, তার মতন সুন্দরী নাকি বাংলাদেশে আর জন্মায়নি। পাছে তার মনে কষ্ট হয় তাই নরেশ এমন কুৎসিত ও দুঃখীর ঘর দেখে বউ এনেছে। সেই তো সর্ব্বেসর্ব্বময়ী কিনা, তা এই পরিমলকে কোন্ দিন না কোন্ দিন তার বাদী হতে না হলেই এখন বাঁচা যায়!”

 সেই হৃদয়ভেদী তীক্ষ্ণ শর পরিমলের মর্ম্মের মধ্যে যে বেঁধানই ছিল; তাই নিষ্ঠুর ও কঠিন হইয়া থাকিয়া সে শান্ত অথচ অবিচলিত দৃঢ়স্বরে উত্তর দিল “তোমার এত বাগান, এত বাড়ী, রয়েছে সে সবের অধিকার ত তুমি ওকে দিলেই পারো, শুধু আমায় যে টুকু ভুল করে দিয়ে ফেলেছ সেই টুকু ছাড়া।—ও যদি স্বর্গের দেবীও হয়, তবু আমার কাছে ওর এতটুকুও জায়গা হবে না।”

 এবার নরেশের মনও বেজায় গরম হইয়া উঠিল। বিরক্তিতে উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া তিনি কথার উপর জোর দিয়া দিয়া তীব্রকণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন, “কি তার অপরাধ?”