পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৭৭

দিয়া উঁকি মারিয়া উঠিতেছে বলিয়া তার বোধ হইল। যতক্ষণ নরেশ তার স্ত্রীর সম্মতি নিতে গিয়াছিলেন, তার মধ্যে একটা অকথ্য লজ্জা ও অত্যন্ত তীর সঙ্কোচে সুষমার যেন উঠিয়া সে ঘর, সে বাড়ী ছাড়িয়া ছুটিয়া পলাইবার ইচ্ছা করিতেছিল। ছিছি, ছিছি কেন সে মরিতে এ বাড়ীর পবিত্রতার মধ্যে—উহাদের দাম্পত্য সুখের মাঝখানে নিজের এই কলঙ্কলাঞ্ছিত পাপছায়া ফেলিতে আসিয়া দাঁড়াইল? সে কি গৃহস্থ ঘরে পা রাখিবার যোগ্যা।—

 নরেশ আসিয়া সঙ্কোচে মৃদুচরণে গৃহে প্রবেশ করিলেন। তাঁহার পায়ের শব্দ শুনিয়াই সুষমার মনের ক্ষীণ দীপশিখাটুকু নিমিষেই নিবিয়া গেল। সে মুখ তুলিল না, নরেশের মুখের দিকে চাহিয়া দেখিল না, কোন প্রশ্ন না করিয়াই যেমন ছিল তেমনি নিষ্ক্রিয় ও নিস্পন্দ হইয়া রহিল। শুধু এতক্ষণের পর একটা প্রবল রোদনোচ্ছাস ভিতরে ভিতরে তাহার বক্ষকে মথিত ও কণ্ঠকে পীড়িত করিয়া অতি তীব্র বিস্ফোরকের মতই বাহির হইয়া আসিবার চেষ্টায় ঠেলিয়া উঠিতে লাগিল।

 বহুক্ষণ এম্‌নি ভাষাশূন্য অসহ নীরবতার মধ্য দিয়া নিজেদের বেদনাকে প্রশমিত হইয়া আসিবার অবসর দান করিয়া এবং তারপর নিজের মনের মধ্যের চক্রাকারে মথিত ক্রোধ ক্ষোভ ও নৈরাশ্যের জ্বালাকে কথঞ্চিৎ দমনে আনিয়া নরেশচন্দ্র যথাসাধ্য সৌম্যভাব অবলম্বনের চেষ্টা পূর্ব্বক বলিলেন “চলো সুষমা! তোমায় এখনকার মতন বেলগাছিয়ার বাগানে নিয়ে যাই।”

 সুষমা এই কথাটুকুর মাঝখান দিয়া যেটুকু বা বাকি ছিল, সেটুকুও বুঝিয়া লইয়া এইবার তার নৈরাশ্য ভয় ও বেদনা বিহ্বল চক্ষু দুটি সুধীরে উঠাইয়া নরেশচন্দ্রের গম্ভীর ও স্থির সঙ্কল্পপূর্ণ দুই চোখের উপর স্থাপন করিয়া বলিল, “কানাই সিংয়ের দেশেই আমাকে পাঠিয়ে দিন, তার বুড়ি